Tuesday, April 21, 2015

সিজদাতে দুয়া

প্রশ্নঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সিজদাতে বেশি বেশি দুয়া করতে বলেছেন। আমি আরবী জানিনা, আমি কি নামাযের মধ্যে সিজদায় নিজের মাতৃভাষায় (বাংলা/ইংরেজী) দুয়া করতে পারবো?
উত্তরঃ বিষয়টি নিয়ে আলেমদের মধ্যে মত পার্থক্য হয়েছে, তবে যেটা বেশি সঠিক তা হলোঃ হ্যা, কেউ যদি আরবী না জানে তাহলে সে দুনিয়া বা আখেরাতের যেকোনো কল্যানের জন্য সিজদাতে নিজের ভাষায় দুয়া করতে পারবে।
এই ক্ষেত্রে দুটি শর্ত রয়েছে –
১. যে যিকির ও দুয়াগুলো করা ফরয সেগুলো আরবীতেই করতে হবে যেমন “সুবহা’না রাব্বিয়াল আ’লা” –এই যিকির আরবীতেই করতে হবে।
২. যেই দুয়া করবেন সেটা আপনি আরবীতে জানেন না। যেমন কেউ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন আর তিনি জানেন আস্তাগফিরুল্লাহ (হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা করো), তাহলে সেই দুয়া তাকে আরবীতেই করতে হবে। কিন্তু তিনি যদি ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করতে চান কিন্তু তিনি জানেন না আরবীতে এই কথা কিভাবে বলতে হবে, তাহলে তিনি বাংলায় এইভাবে বলতে পারবেন, ‘হে আল্লাহ তুমি আমাকে ঋণ থেকে মুক্ত করো’।
এই ব্যাপারে আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শায়খ আসিম আল-হাকিম।
বিঃদ্রঃ সিজদা হলো দুয়া কবুলের সবচেয়ে উত্তম সময়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “বান্দা যখন সিজদা করে সে তখন তার রব্বের সবচেয়ে নিকটে পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা ঐ সময় বেশি বেশি দুয়া করো”
অন্য হাদীসে এসেছে, “তোমরা সিজদাতে দুয়া করতে চেষ্টা করো, আশা করা যায় তোমাদের দুয়া কবুল করা হবে।”
মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৪।
সিজদাতে দুয়া করার নিয়মঃ
অনেকের মনে প্রশ্ন আছে বা বিষয়টা ভুল বুঝেছেন। তাই বিস্তারিত বলা হলো। কারো অন্য প্রশ্ন থাকলে দয়া করে কমেন্টে জানাবেন।
প্রশ্নঃ আমি কোন সিজাদাতে দুয়া করবো, নামাযের মধ্যে সিজদাতে নাকি আলাদা সিজদা করতে হবে দুয়া করার জন্য?
উত্তরঃ যে কোনো নামাযের মধ্যে সিজদাতে দুয়া করা যাবে। দুয়া করার জন্য নামায ব্যতীত শুধু সিজদা করা জায়েজ নয়। শুধুমাত্র তেলাওয়াতের সিজদাহ ও শুকরিয়ার সিজদাহ ছাড়া, নামায ব্যতীত শুধু সিজদাহ করা বৈধ নয়।
প্রশ্নঃ ফরয নামাযে দুয়া করতে পারবো নাকি সুন্নত/নফল নামাযের সিজদাতে দুয়া করতে হবে?
উত্তরঃ যে কোনো নামাযের সিজদাতে দুয়া করা যাবে, চাই সেটা ফরয হোক আর নফল সুন্নত হোক, কারণ, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমভাবে সিজদাতে দুয়া করতে বলেছেন, তিনি শুধুমাত্র নফল সুন্নতে করার জন্য আর ফরয নামাযে না করার জন্য – এইরকম ভাগ করে দিয়ে যান নি। তাই, এই কথা বলার কারো অধিকার নাই, ফরয নামাযে করা যাবেনা। যে এইরকম করবে সে কোনো দলীল ছাড়াই শরীয়ত বানানোর দায়ে অভিযুক্ত হবে।
(শায়খ আব্দুল আজীজ বিন বাজ এই ফতোয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন)।
প্রশ্নঃ কিভাবে দুয়া করতে হবে?
আপনি স্বাভাবিকভাবে নামায পড়বেন, সিজদাতে যাবেন, সিজদার তাসবীহগুলো যেমন “সুবহা’না রাব্বিইয়াল আ’লা” ৩/৫/৭ বার অবশ্যই আরবীতে পড়বেন। সিজদার তাসবীহ পড়া হলে আপনি দুয়া করবেন। আরবী জানলে আরবীতে, না জানলে নিজের ভাষাতে।
প্রশ্নঃ নামাযে দুনিয়াবী কোনো কল্যান প্রার্থনা করা যাবে?
উত্তরঃ হ্যা, যাবে যদিনা সেটা হারাম কোনো কিছু হয়ে থাকে। আমাদের দেশের অনেক হুজুর বলে নামাযে দুনিয়ার কোনো কিছু চাইলে নামায ভেঙ্গে যাবে, এই কথার কোনো দলীল নেই, কোনো দলীল নেই। এটা একটা মনগড়া ফতোয়া। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নামাযের মধ্যে দুনিয়ার কল্যান চেয়েছেন, যেমন ২ সিজদার মাঝখানে তিনি বলতেন “হে আল্লাহ তুমি আমাকে রিযক দান করো” – রিযক দুনিয়া না আখেরাতের বিষয় আশা করি সকলেই জানেন।
আর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, দুয়া করতে তিনি দুনিয়ার কোনো কিছু চাইতে না করেন নি। সুতরাং এর পরে কারো ক্ষমতা নেই, না করার।
প্রশ্নঃ ফরয নামাযে জামাতে দুয়া করা যাবে?
উত্তরঃ হ্যা যাবে, যদি সিজদার তাসবীহ পড়ার পরে ইমাম সাহবে যথেষ্ঠ সময় দেন তাহলে করা যাবে। আর যদি সময় কম থাকে তাহলে আগে সিজদার তাসবীহ পড়তে হবে

রফউল ইয়াদাইন

রফউল ইয়াদাইন


প্রশ্ন: নামাজ পড়ার সময় রফউল ইয়াদাইন করা হয় এটা কুরআন ও হাদীস সম্মত কিনা। রফউল ইয়াদাইন করলে  সওয়াব আছে কি?
উত্তর: রফউল ইয়াদাইন (রুকুতে যাওয়ার সময় ও রুকু হতে ওঠার সময় হাত উঁচু করা) করা এবং না করা নিয়ে বিভিন্ন মাযহাব পন্থিদের মধ্যে বিস্তর মতভেদ লক্ষ্য করা যায়। যারা রফউল ইয়াদাইনের বিপক্ষে, তারা বলেন: যেন একসময় রফউল ইয়াদাইন রাসূল (সা.) করেছেন, পরে এটি মনসূখ বা রহিত হয়েছে। আর যারা পক্ষে, তাদের দলীল রয়েছে অসংখ্য সহীহ হাদীস।
যারা হানাফী মাযহাবের অনুসারী তারা নামাজে রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে ওঠার সময় রফ’উল ইয়াদাইন করে না। আলিম সমাজ আমাদের মত সাধারণ মুসল্লীদের বলে থাকেন, এটি নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রথম দিকে করেছেন এবং শেষের দিকে বাদ দিয়েছেন অর্থাৎ মানসুখ হয়ে গেছে। সেই বিশ্বাসেই আজ সাধারণ মুসল্লীগণ রফ’উল ইয়াদাইন করেন না। যাহা অন্যান্য মাযহাব এবং আমাদের দেশে আহলে হাদীস বা সালাফীগণ করে থাকেন। মসজিদের হুজুরকে জিজ্ঞেসা করলে বলে, দু’ইটাই সুন্নাত। আসুন
একটু বিস্তারিত আলোচনা করে দেখা যাকঃ
প্রথমেই আমাদের হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠ আলিমগণের মতামত দিয়ে শুরু করা যাকঃ
১।  ‘মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ সালাতে রুকুতে যাওয়ার সময় ও রুকু থেকে উঠার সময় দু’ হাত না তোলা সম্পর্কে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সবই বাতিল হাদীস। তন্মধ্যে একটিও সহীহ নয়। (মাওযু’আতে কাবীর, পৃ-১১০)
২। হানাফী মুহাদ্দিস আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (রহঃ) রুকুতে যাওয়ার পূর্বে রফ’উল ইয়াদাইন করার ব্যাপারে ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) সম্পর্কে লিখেছেনঃ ইমাম আবূ হানিফা সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তা ত্যাগ করলে গুনাহ হবে। (উমদাতুল ক্বারী, ৫/২৭২)
৩। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ যে মুসল্লী রফ’উল ইয়াদাইন করে ঐ মুসল্লী আমার কাছে অধিক প্রিয় সেই মুসল্লীর চাইতে যে রফ’উল ইয়াদাইন করে না। কারণ রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীসগুলো সংখ্যায় বেশি এবং অধিকতর মজবুত। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২/১০)
তিনি আরো বলেন, রফ’উল ইয়াদাইন হচ্ছে সম্মান সূচক কর্ম। যা মুসল্লীকে আল্লাহর দিকে রুজু হওয়ার ব্যাপারে এবং সালাতে তন্ময় হওয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দেয়। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২/১০)
৪। আল্লামা আবুল হাসান সিন্ধী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ যারা এ কথা বলে যে, তাকবীরে তাহরীমাহ ছাড়া রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় দু’ হাত তোলার হাদীস মানসূখ ও রহিত, তাদের ঐ দাবী দলীলবিহীন এবং ভিত্তিহীন। (শারহু সুনানে ইবনে মাজাহ, মিসরের ছাপা ১ম খণ্ড ১৪৬ পৃষ্ঠার টিকা)
৫। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমিরী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ এ কথা জানা উচিত যে, সালাতে রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীস সূত্র ও ‘আমালের দিক দিয়ে মুতাওয়াতির, এতে কোনই সন্দেহ নেই। আর এটা মানসূখও নয় এবং এর একটি হরফও নাকচ নয়। (নাইলুল ফারকাদাইন, পৃ- ২২, রসূলে আকরাম কী নামায, পৃ-৬৯)
৬। হানাফী মাযহাবের ফিক্বাহ গ্রন্থাবলীতেও রাফ’উল ইয়াদাইনের পক্ষে বক্তব্য রয়েছে। তন্মধ্যকার কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ
(ক) রুকু’র পূর্বে ও পরে রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীস প্রমাণিত আছে। (আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৪, নুরুল হিদায়া)
(খ) রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীস, রফ’উল ইয়াদাইন না করার হাদীসের চাইতে শক্তিশালী ও মজবুত। (আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৯)
(গ) বায়হাক্বীর হাদীসে আছে, ইবনু উমার বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত সালাতের মধ্যে রফ’উল ইয়াদাইন করেছেন। (আয়নুল হিদায়া ১/১৮৬)
(ঘ) রফ’উল ইয়াদাইন না করার হাদীস দুর্বল। (নুরুল হিদায়া, ১০২)
(ঙ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে রফ’উল ইয়াদাইন প্রমাণিত আছে এবং এটাই হাক্ব। (আয়নুল হিদায়অ ১/৩৮৬)
এবার সহীহ হাদীসের আলোকে রফ’উল ইয়াদাইনের কয়েকটি প্রসিদ্ধ হাদীস বর্ণনা করা হলোঃ
(১) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে দেখেছি, তিনি যখন সালাতেস জন্য দাঁড়াতেন তখন কাঁধ পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন, এবং তিনি যখন রুকুর জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন, আবার যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এ রকম করতেন এবং সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ বলতেন। তবে তিনি সাজদাহর সময় এমন করতেন না। (সহীহুল বুখারী, ৭৩৪, ৭৩৫, মুসলিম, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, আহমাদ, মুয়াত্তা মালিক, মায়াত্তা মুহাম্মাদ, ত্বাহাভী, বায়হাক্বী, তিরিমিযী)
(২) মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন সালাতের জন্য তাকবীর দিতেন তখন কান পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন। একইভাবে তিনি রুকু’তে যাওয়ার সময় কান পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন এবং রুকু’ থেকে উঠার সময়ও কান পর্যন্ত হাত উঠাতেন ও সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ বলতেন। (সহীহ মুসলিম হা/৩৯১, সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ, সহীহ আবূ দাউদ, ইরওয়অ ২/৬৭, হাদীসটি সহীহ)
(৩) আলী (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে তাকবীরে তাহরীমাহর সময়, রুকু’র সময়, রুকু’ হতে মাথা উঠানোর সময় এবং দু’ রাক’আত শেষে তৃতীয় রাক’আতে দাঁড়ানোর সময়ে রফ’উল ইয়াদাইন করতে দেখেছেন। (বায়হাক্বী ২/৮০, বুখারীর জুযউল ক্বিরআত, আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ)
(৪) ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে সালাত আদায় করেছি। তিনি তাকবীর দিয়ে সালাত আরম্ভ করে দু’হাত উঁচু করলেন। অতঃপর রুকু’ করার সময় এবং রুকু’র পরেও দু’হাত উঁচু করলেন। (আহমাদ, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, ইবনে মাজাহ, আবূ দাউদ)
(৫) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর বলেন, আমি নাবী (সা.) এর দশজন সাহাবীর মধ্যে আবূ হুমাইদের নিকট উপস্থিত ছিলাম, তাঁদের (আবূ হুমাইদ, আবূ উসাইদ, সাহল ইবনু সা’দ, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ- (রা.) প্রমুখ সাহাবীগণের মধ্যে একজন আবূ ক্বাতাদাহ ইবনু রবয়ী (রা.) ও ছিলেন। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সালাত সম্পর্কে আপনাদের চাইতে বেশি অবগত। তাঁরা বললেন, তা কিভাবে? আল্লাহর শপথ! আপনি তো আমাদের চেয়ে তাঁর অধিক নিকটবর্তী ও অধিক অনুসরণকারী ছিলেন না। তিনি বললেন, বরং আমি তো তাঁকে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম। তাঁরা বললেন, এবার তাহলে উল্লেখ করুন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন দু’হাত উঁচু করতেন এবং যখন রুকু’ করতেন, রুকু’ থেকে মাথা উঠাতেন, এবং দু’ রাক’আত শেষে তৃতীয় রাক’আতে দাঁড়াতেন তখনও দু’ হাত উঁচু করতেন। এ বর্ণনা শুনে তাঁরা সবাই বললেন, আপনি সত্যই বলেছেন। (বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, সহীহ ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাউদ)
রফ’উল ইয়াদাইন সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস ও আসারের সংখ্যা এবং সেসবের মান-
(ক) রফ’উল ইয়াদাইন সম্পর্কে বর্ণিত সর্বমোট সহীহ হাদীস ও আসারের সংখ্যা অন্যূন ৪০০ শত। (সিফরুস সাআদাত, পৃ-১৫)
(খ) ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, রফ’উল ইয়াদাইনের হাদীসসমূহের সনদের চেয়ে বিশুদ্ধতম সনদ আর নেই। (ফাতহুল বারী ২/২৫৭)
(গ) হাদীসের অন্যতম ইমাম হাফিয তাকীউদ্দিন সুবকী (রহ.) বলেন, সালাতের মধ্যে রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীস এতো বেশি যে, রফ’উল ইয়াদাইনের হাদীসকে মুতাওয়াতির বলা ছাড়া উপায় নেই। (সুবকীর জুযউ রফ’উল ইয়াদাইন)
রফ’উল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণের সংখ্যা-
রুকু’তে যাওয়া ও রুকু’ হতে উঠার সময় রফ’উল ইয়াদাইন করা সম্পর্কে চার খলীফাসহ প্রায় ২৫ জন সাহাবী  থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহ রয়েছে। (সালাতুর রসূল (সা.), পৃষ্ঠা ৬৫, হাদীস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
সুতরাং নির্দিধায় বলা যায় যে, রফউল ইয়াদাইন করাটাই উত্তম। এবং এই আমল করাতে সাওয়াব বেশি রয়েছে।

দৈনন্দিন তসবীহ্ ও দোয়া সমুহ

দৈনন্দিন তসবীহ্ ও দোয়া সমুহ

ফজরের জন্য ঘুম থেকে উঠার পরঃ
আল-হামদুলি্ল্লাহিল্লাযী আহ্‌ইয়ানা বা’দামা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর। (বুখারী, মুসলিম)।
অর্থ: সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে (নিদ্রারুপ) মৃত্যুর পর পুর্নজাগরিত করলনে, এবং তিনি আমাদেরকে (এইরূপেই কিয়ামতের দিন) তাঁর নিকট একত্রিত করবেন।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহিদা্হু লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলক্ ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শা্য়্যিন ক্বাদীর। ছুবাহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার ওয়া লা হাওলা ওয়া লা ইলাহা ইল্লা বিল্লাহিল আলীয়্যিল আযীম। আল্লাহুম্মাগফিরলী।
ফযীলতঃ যে ব্যক্তি অজুসহ রাতে ঘুমায়, অতপর রাতে জেগে উঠেই এ দোয়া পড়ে তারপর যে আবেদন করে তা কবুল হবে, এবং যথাযথ অজু করে সালাত আদায় করলে তা কবুল হবে (তিরমিযী)
নামাযের জন্য মসজিদে যাওয়ার আগে পড়বেঃ
আল্লাহুম্মাজআল ফী ক্বালবী নুরাওঁ ওয়া ফী লিসানি নুরাওঁ ওয়াজআর ফী ছাময়ী নুরাওঁ ওয়াজআল ফী বাছারী নুরাওঁ ওয়াজআল মিন খালফী নুরাওঁ ওয়া মিন আমামি নুরাওঁ ওয়াজআল লী মিন ফাওক্বী নুরাওঁ ওয়া মিন তাহতী নুরাওঁ আল্লাহুম্মা আ’তিনী নুরাঁও।
অর্থঃ হে আল্লাহ্! আমার ক্বলবে নুর দিন, আমার জিহ্বায় নুর দিন, আমার কর্ণে নুর দিন, আমার চোখে নুর দিন, আমার পিছনে ও সামনে নুর দিন, আমার উপরে ও নীচে নুর দিন। হে আল্লাহ্ আমাকে নুর দিন।
ফজীলতঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত – যে ব্যক্তি সালাতের জন্য ঘর থেকে বেরোনোর সময় এ দোয়া পাঠ করে আল্লাহ্ তার জন্য সত্তুর হাযার ফিরিশতা নিয়োজিত করবেন যারা তার জন্য ক্ষমা পার্থনা করতে থাকবে। এবং সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ্ তার দিকে অনুগ্রহের দৃষ্টিতে তাকাবেন। (যাদুল মা’আদ)।
ফজরের সুন্নাতের পর ফরজ নামাযের আগে পড়বেঃ
ছুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী ছুবহানাল্লাহিল আযীমি আস্তাগফিরুল্লাহ্
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের সুন্নাতের পর ফরজ নামাযের আগে ১০০ বার পড়বে দুনিয়া তার নিকট ফিরে আসবে (অর্থাৎ তার ধন-সম্পদে অশেষ বরকত হবে); আল্লাহ্ উক্ত দোয়ার প্রতিটি শব্দ থেকে এক একজন ফিরিশতা সৃষ্টি করে কিয়ামত পর্যন্ত তসবীহ্ পাঠে নিযুক্ত করে দিবেন এবং তার সওয়াব এর পাঠকারী পেতে থাকবে। (তিরমিযী, এহ্‌ইয়া)।
প্রত্যেক ফরয নামাযের পরঃ
– রাসুলুল্লাহ্ নামাযের পর সালাম ফিরিয়ে এরুপ পড়তেন।
যে এরূপ আমল করবে তার ও জান্নাতের মধ্যে একটিই মাত্র প্রতিবন্ধক থাকে, আর তা হলো মৃত্যু। আর পরবর্তী নামায পর্যন্ত সে আল্লাহর যিম্মায় থাকে। (যাদুল মাআদ)
‘আস্তাগফিরুল্লাহ্’, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ্’, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ্’।
আয়াতুল কুরছী ১ বার।
আল্লাহুম্মা আন্তাচ্ছালামু ওয়া মিনকাচ্ছালামু ওয়া তাবারাকতা ইয়া যাল-যালালি ওয়াল ইকরাম (অর্থ- হে আল্লাহ্! আপনি শান্তি, আপনা থেকেই শান্তি, বরকতসমূহ আপনারই, হে গৌরব ও সম্মানের অধিকারী।) (এহ্ইয়া ২ খণ্ড)।
আল্লাহুম্মা আজেরনী মিনান্না-র (অর্থ- হে আল্লাহ্ আমি আপনার নিকট জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই)
ফযীলত যে ব্যক্তি ফযরের পর ৭ বার এ দোয়া পাঠ করবে সেইদিন মৃত্যু হলে তার জন্য জাহান্নামের ৭ টি দরজাই নিষিদ্ধ করা হবে। অনুরুপ ভাবে সন্ধ্যায় (মাগরিবের পর) ৭ বার এ দোয়া পাঠ করবে সেইদিন মৃত্যু হলে তার জন্য জাহান্নামের ৭ টি দরজাই নিষিদ্ধ করা হবে। (রওয়ায়েত)।
প্রত্যেক নামাযের পরঃ
সুবহানাল্লাহ্ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ্ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার এবং একবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহিদা্হু লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলক্ ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শা্য়্যিন ক্বাদীর।
ফযীলতঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর উক্তরূপে তসবীহ্ পাঠ করে তার সকল গুনাহ্ মার্জিত হয়ে যায় যদিও তা সমুদ্রের ফেণরাশির মত অফুরন্ত হয়। (এহ্‌ইয়া)।
যে প্রত্যহ ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহি ও বিহামদিহী’ পাঠ করে তার পাপরাশি সমুদ্রের ফণরাশির ন্যায় অপরিসীম হলেও তা ক্ষমা করা হয়। (এহ্‌ইয়া)
সকাল-সন্ধ্যায়ঃ
হাসবিয়াল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আযীম। (যাদুল মাআদ)
অর্থ- আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তারই উপর নির্ভর করছি, আর তিনি হচ্ছেন মহান আরশের অধিপতি।
ফযীলতঃ সকাল-সন্ধ্যায় ৭ বার পড়লে দুনিয়া ও আখিরাতের সকল চিন্তা ভাবনার জন্য আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হবেন।
বিছমিল্লাহিল্লাযী লা ইয়াদুররু মাআ ইছমিহী শাইয়্যুন ফীল আরদ্বি ওয়া হুয়াচ্ছামীয়ুল আলীম। ৩ বার। (তিরমিযী, যাদুল মাআদ)
অর্থঃ আল্লাহর নামে (আমি এই দিন বা রাত শুরু করছি)- যার নামের বরকতে আসমান ও যমীনের কেউ কোন ক্ষতি করতে সক্ষম নয়। তিনি সব শুনেন ও জানেন।
ফযীলতঃ যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় এ দোয়া ৩ বার করে পাঠ করে তাকে সর্বপ্রকার ক্ষতি থেকেই হিফাজত করা হয়।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহিদা্হু লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলক্ ওয়া লাহুল হামদু ইউহ্‌য়ী ওয়া ইউমীতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শা্য়্যিন ক্বাদীর।
ফযীলতঃ যে ব্যক্তি এ দোয়াটি ১০ বার পাঠ করবে সে ব্যাক্তি ইসমাঈলীয় বংশের ১০ জন গোলাম আযাদ করার পুণ্য লাভ করবে। তার ১০ টি গুনাহ্ মাফ করা হবে, এবং ১০ টি পদর্যাদা উন্নত করা হবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান থেকে হিফাজতে থাকবে। তার চেয়ে সকলের চেয়ে বেশী পূণ্যের অধিকারী হবে যদি না কেউ তার চেয়ে বেশী এই দোয়া পাঠ করে থাকে। (যাদুল মাআদ)। এ দোয়াটি প্রতিদিন ১০০ বার পাঠ করলে বিশেষ ফযীলতের অধিকারী হবে। (বোখারী, মুসলিম, এহ্‌ইয়া)। যে ব্যক্তি বাজারে গিয়ে এ দোয়া পাঠ করে আল্লাহ্ তার জন্য এক লক্ষ নেকী লিখে দেন ও এক লক্ষ গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন, আর তার জন্য বেহেশতে একটি গৃহ নির্মান করে রাখা হয়। (এহ্‌ইয়া)। যে ব্যক্তি দিনে ২০০ বার উক্ত কালাম পাঠ করে কেউই তার পূর্বে (জান্নাতে) যেতে পারবে না এবং কেউই তার নাগাল পাবে না। শুধু যে ব্যক্তি তার আমল থেকে উত্তম আমল করে তার কথা ভিন্ন। (এহ্‌ইয়া)।
আল্লাহুম্মা ইন্নী আছবাহ্‌তু আশহাদুকা, আশহাদু জুমলাতা আরশিকা ওয়া মালাইকাতিকা, ওয়া জামীআ খালক্বিকা, ইন্নাকা আনতাল্লাহুল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুকা ওয়া রাসুলুক। ৪ বার
অর্থ-হে আল্লাহ্ আমি সকাল করছি আপনাকে সাক্ষ্য রেখে, আরশবাহী ফিরিশতাদের সাক্ষ্য রেখে, সমস্ত সৃষ্টি জগতকে সাক্ষ্য রেখে – নিশ্চয়ই আপনিই সেই সত্বা যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, আর মুহাম্মদ সা. আপনার বান্দা ও রাসুল।
মাগরিবের পর উপরোক্ত দোয়ায় ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আছবাহতু’ এর স্থলে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আমছাইতু’ অর্থাৎ ‘সকাল করছি’ এর বদলে ‘সন্ধ্যা করছি’ বলবে।
ফযীলতঃ যে ব্যক্তি এ দোয়া উল্লেখিত নিয়মে পড়বে, ১ বার পড়ার পর তার দেহের এক চতুর্থাংশ জাহান্নাম থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় বার পাঠের পর অর্ধাংশ, তৃতীয়বার পাঠের পর তিন চতুর্থাংশ ও চতুর্থবার পাঠের পর সম্পূর্ণ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। (যাদুল মাআদ)
রাদ্বী-তু বিল্লাহি রাব্বাও ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনাও ওয়া বি মুহাম্মাদি নাবিয়্যা। ৩ বার।
অর্থঃ আমি সন্তুষ্ট আছি আল্লাহ্‌কে প্রতিপালক হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে ও মুহাম্মদ সা. কে নবী হিসাবে পেয়ে।
ফযীলতঃ যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় (অর্থাৎ ফজর ও মাগরিবের পর) এ দোয়াটি ৩ বার করে পাঠ করবে তার উপর সন্তুষ্ট হওয়া আল্লাহর উপর দায়ীত্ব হয়ে যায়। (তিরমিযী)
ছুবহানাল্লাহি ওয়া আলহামদুলিল্লাহি, ওয়া লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার। প্রতিদিন ১০০ বার।
অর্থঃ আল্লাহ্ পবিত্র, সকল প্রশংসা তাঁরই, তিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ।
ছুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী আদাদা খালক্বীহি ওয়া রেদ’আ নাফছিহী ওয়া জ্বীনাতা আরশিহী ওয়া মিদাদা কালিমাতিহী।
অর্থঃ আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার প্রশংসা সহকারে, তার সৃষ্টিরাজির সমপরিমান, তার স্বীয় সন্তুষ্টির অনুরূপ, তার আরশের ওজনের পরিমান এবং তার বানীসমূহ লিখনের কালির পরিমান।
আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইলমান নাফীয়্যান, ওয়া রিযকান তায়্যিবান, ওয়া আমালাম মুতাকাব্বালান।
অর্থঃ হে আল্লাহ্ আমি তোমার নিকট উপকারী ইলম, পবিত্র রিযিক এবং গ্রহণযোগ্য আমলের আবেদন করছি।
সাইয়্যিদুল ইস্তিগফারঃ
আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আন্তা খালাক্বতানী ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহ্‌দিকা, ওয়া ওয়া’দিকা মাছত্বোয়াতাতু, আউযুবিকা মিন শাররি মা ছানা’তু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ লাকা বিজাম্বি, ফাগফিরলী। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লাহ আন্তা।(যাদুল মাআদ)।
অর্থঃ হে আল্লাহ্ তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমাকে সৃষ্টি করেছ এবং আমি তোমার বান্দা। আর আমি সাধ্যমত তোমার অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতির উপর কায়েম আছি। আমি মন্দ যা করেছি তা থেকে তোমার আশ্রয় চাই। আমার উপর তোমার প্রদত্ত নেয়ামতের স্বীকৃতি দিচ্ছি। আর আমার গুনাহ্‌গুলো স্বীকার করছি। অতএব আমাকে ক্ষমা কর। কারণ তুমি ছাড়া গুনাহ্ ক্ষমা করার আর কেউ নেই।
ফজিলতঃ রাসুল সা. বলেছেন, তোমাদের কেউ এ কথাগুলো সন্ধ্যা বেলায় বললে, অতপর সকাল হওয়ার আগেই তার মৃত্যু হলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। অনুরূপভাবে তোমাদের কেউ তা সকাল বেলায় বললে, অতপর সন্ধ্যার আগেই তার মৃত্যু হলে তার জন্যও জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারী, তিরমিযী)
আস্তাগফিরূল্লাহিল আযীমিল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হায়্যুল কাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহে ( অর্থঃ আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থণা করছি যিনি ছাড়া আর কেউ উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব চিরস্থায়ী এবং আমি তাঁর নিকট প্রত্যাবর্তনকারী।)
– হযরত আবু সাইদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি শয়নকালে ৩ বার উক্ত ইস্তিগফার পাঠ করে, আল্লাহ্ তার গুনাহ্ মাফ করে দেন যদিও তা সমুদ্রের ফণরাশি বা বৃক্ষের পত্ররাজি বা টিলার বালুরাশি বা দুনিয়ার দিনগুলির সমসংখ্যক হয়। (তিরমিযী)। রাসুল সা. আরও বলেছেন যে এরূপ বলে তার গুনাহসমূহ মার্জিত হয় যদিও সে জিহাদ থেকে পালিয়ে যায়। (এহ্‌ইয়া)।
ঘুমানোর আগে পড়বেঃ
ওযু সহকারে ঘুমাবে। ঘুমানোর আগ পড়বে- আল্লাহুম্মা বিইছমিকা আমুতু ওয়া আহ্‌ইয়া। অর্থঃ হে আল্লাহ্ আমি তোমার নামে ঘুমাই তোমার নামেই জাগরিত হই। হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ্ যখন ঘুমোতে ইচ্ছা করতেন তখন উক্ত দোআ পড়তেন। আবার ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে বলতেন, “আল-হামদুলি্ল্লাহিল্লাযী আহ্‌ইয়ানা বা’দামা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী)

তায়াম্মুম

তায়াম্মুমঃ-
“অতঃপর পানি না পাও তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও অর্থাৎ স্বীয় মুখ মন্ডল ও হস-দ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল”।–মায়িদা-৬।
      হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসের(রাঃ) হইতে বর্নিত,নবী করিম(সঃ) আমাকে একটি কাজে পাঠিয়েছিলেন,তথায় আমার স্বপ্ন দোষ হয়েছিল।আমি পানি পাচ্ছিলামনা।তখন আমি গোসলের জন্য তায়াম্মুমের নিয়তে চতুষ্পদ জন-ুর ন্যায় কয়েক বার এদিক সেদিক মাটিতে গড়াগড়ি করলাম।অতঃপর নবী করিম(সঃ) এর কাছে ঘটনা বললাম,নবী(সঃ) আমাকে বললেন,তোমার জন্য এইটুকু যথেষ্ট হয়ে যেত যে,পবিত্র মাটিতে একবার হাত মারিয়া উভয় হাত এবং মুখমন-লকে মসেহ করে ফেলতে।অতঃপর হুজুর(সঃ) তা করে দেখালেন।*বোখারী ও মুসলীম*।
তায়াম্মুমের ফরজ সমুহ
১. নিয়ত করা।
২. সমস্ত মুখমন্ডল একবার মসেহ করা.
৩. দুই হাত কনুইসহ একবার মসেহ করা।
যেই সুমস্ত কারনে তায়াম্মুম করা যায়
১. পানি ব্যবহারের কারনে যদি কোন অসুস্ত ব্যক্তির রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে।
২. পানি ব্যবহারের কারনে যদি রোগ মুক্তি বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. অত্যাধিক শীতের সময়ে পানি ব্যবহারের কারনে প্রাননাশের বা রোগাত্রুান- হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে।তবে এই ক্ষেত্রে পানি গরম করে ব্যবহার করা উত্তম যদি পানি গরম করার অবস্থাও না থাকে তবে এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করা যাবে।
৪. যদি একান-ই পানি না পাওয়া যায় কিংবা এক মাইল পথ পাড়ি দিতে হয় পানির জন্য তবে তায়াম্মুম করা যাবে।
৫. পানি সংগ্রহ করতে গেলে যদি শত্রু র্কতৃক আত্রুান- হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬. হায়েয-নেফাস শেষে পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে।
৭. যদি পানি কিনতে হয় এবং পানি কেনার পয়সা সাথে না থাকে।
৮. সঙ্গে যে পানি আছে সে পানি ব্যবহার করলে যদি পানি পিপাসায় জীবন হানির আশংকা থাকে।
যেই সব কারনে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়
যেই সমস্ত কারনে ওযু ভঙ্গ হয় সেই সমস্ত কারনে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আলো, বাতাস পানি দিয়ে লালন-পালন করে যাচ্ছেন- সে কারণে তার বান্দা হিসেবে প্রতিদিন obligatory duty  হিসেবে ফরজ সালাত আদায় করতে হবে। বান্দা হিসেবে দৈনিক পাঁচবার হাজিরা দেয়ার জন্য ফরজ সালাত পড়তে হবে। ফরজ সালাতের বাইরে রয়েছে আরো অনেক ধরনের সালাত যেমন সুন্নাত, ওয়াজিব,মুস্তাহাব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, সুন্নাতে জায়িদাহ, চাশতের সালাত, ইশরাকের সালাত, সালাতুত তসবিহ, সালাতুত তওবা,তাহাজ্জুদের সালাত, ইসতিখারার সালাত ইত্যাদি। এসব সালাতের বিভিন্ন মর্যাদা রয়েছে। তবে এর মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট সালাত হচ্ছে সালাতুত তাহাজ্জুদ। তাহাজ্জুদের নামাজ নবী করিম সাঃ-এর ওপর ফরজ ছিল।
উম্মতের ওপর এটি ফরজ না হলেও সব সুন্নাত নামাজের মধ্যে এটিই উত্তম। তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগা আর তাহাজ্জুদের সময় হলো ইশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে তারপর অর্ধেক রাতের পর নামাজ আদায় করা। সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত থাকে। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে নামাজ আদায়ে সাওয়াব বেশি। পবিত্র মক্কা ও মদিনায় হারামাইন শারফাইন ও তাহাজ্জুদের সালাতের জন্য আজান দেয়া হয় এবং অতি গুরুত্বের সাথে আদায় করা হয়। পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ হয়েছে, যারা শেষ রাতে ইবাদাত ও প্রার্থনা করেন তাদের প্রশংসাস্বরূপ কিয়ামত দিবসে বলবেনঃ ‘তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করত এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত। (সূরা) আযযারিয়াত আয়াত (১৭-১৮)
রাসূল সাঃ-কে সম্বোধন করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক আরো বলেন, ‘এবং রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ পড়তে থাকুন। এ আপনার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রভু আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন। (সূরা আল ঈসরা আয়া ৭৯) তানভীরুল মিশকাত গ্রন্থের প্রণেতা ঈমান মহিউস সুন্নাহ বাগবী রাঃ তিরমিজি শরিফের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন হজরত আবু উমামাহ সাঃ ফরমায়েছেনঃ ‘তোমরা রাত জেগে (তাহাজ্জুদ) নামাজ পড়াকে বাধ্যতামূলক করে লও।’ হাদিস নং ১১৫৭/২
তাহাজ্জুদ নামাজ নফসের রিয়াজাত ও তরবিয়াতের এক বিশেষ মাধ্যম। কারণ তখন সুখশয্যা ত্যাগ করেই ইবাদতে মশগুল হতে হয়। এটি মন ও চরিত্রকে নির্মল ও পবিত্র করা এবং সত্য পথে অবিচল রাখার জন্য অপরিহার্য ও অতীব কার্যকর পন্থা। আল কুরআনের সূরা মুজ্জামিলে এর উল্লেখ করা হয়েছে ‘অবশ্যি রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য কুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা জিকর একেবারে যথার্থ।’ (আয়াতঃ ৬ সূরা আল ফুরকান-এর ৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’- ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুফর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজিত হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল যে, তারা রাতের শেষ ভাগে আল্লাহতায়ালার মহান দরবারে চোখের পানি ফেলতেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। ‘তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী,পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে এবং ভুলত্রুটির ক্ষমাপ্রার্থী। (সূরা আলে ইমরান আয়াত ১৭)
হাদিস শরিফেও তাহাজ্জুদের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার সুনানে আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “আবু হোরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ-কে বলতে শুনেছি। আফজালুস সালাতি বাদাল মাফরুদাতি সালাতুল লাইলি” অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। হাদিস নম্বর ১১৬৭/২। হজরত আবু হোরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসূল সাঃ ফরমায়েছেন, ‘আল্লাহ প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে,আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব? (বুখারি ও মুসলিম)-
শরহে সুন্নাহর বরাত দিয়ে মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার আবু সাঈদ খুদরি রাঃ বর্ণিত একটি হাদিসের উল্লেখ করেন। বলা হয়েছে, ‘রাসূল সাঃ ফরমায়েছেন তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ খুশি হন (হাসেন) এক. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য ওঠেন এবং নামাজ পড়েন। দুই. জনতা, যারা নামাজের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। তিন. মুজাহিদ যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। (হাদিস নম্বর ১১৬০/২)
অনুরূপ অন্য আরেকটি হাদিস রয়েছে, হজরত জাবির রাঃ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ-কে বলতে শুনেছি। রাতের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত আছে যদি কোনো মুসলমান তা লাভ করে এবং আল্লাহর কাছে ইহ ও পরকালের কোনো কল্যাণ চায় আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে তা দেন। (মুসলিম)
উপরিউক্ত কুরআন ও হাদিসের বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, সালাতসমূহের মধ্যে তাহাজ্জুদ অতি মর্যাদাকর সালাত। এই সালাত প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর পক্ষেই চড়থধয়মধপ করা উচিত। এই সালাতের মাধ্যমে হয়তো আল্লাহর নৈকট্য লাভ সহজ হবে। সৃষ্টিকর্তার সাথে যখন দূরত্ব কমে যাবে তখন সৃষ্টিকর্তা বান্দার দাবি রক্ষা করতে পারেন।
তাহাজ্জুতের নামাজে কি কোন বিশেষ নিয়ম রয়েছে ?
আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত রাসুল সাঃ তাহাজ্জুতে এগার রাকাত সালাত আদায় করতেন এবং তা ছিল তার স্বাভাবিক সালাত । সেই সালাতে তিনি এক একটি সিজদা এতো পরিমান দীর্ঘ করতেন যে , তোমাদের কেউ সিজদা থেকে তার মাথা তুলার আগে পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারত । আর ফজরের ফরজ সালাতের আগে তিনি দু রাকাত সালাত । তারপর তিনি ডান কাঁতে শুইতেন যতক্ষন না সালাতের জন্য তার কাছে মুয়াজ্জিন আসতো । ১০৫৬
আরেকটি হাদিসঃএকজন লোক রাসুল সাঃ জিজ্ঞেস করলেন হে রাসুল সাঃ রাতের সালাত (তাহাজ্জুত) আদায়ের পদ্ধতি কি ? তিনি বললেন দু রাকাত করে । আর ফযর হয়ে যাবার আশঙ্কা করলে ১ রাকাত মিলিয়ে বিতর আদায় করে নেবে । ১০৭১
ইবন আব্বাস বর্ণনা করেন নবী করিম সাঃ এর রাতের সালাত ছিল ১৩ রাকাত এর (তাহাজ্জুত এবং বিতর সহ )১০৭২
এই থেকে প্রমানিত হয় যে তাহাজ্জুত এর সালাত অন্য সব সালাত এর মতন ই । কোন ব্যতিক্রম নাই এর নিয়মে । এই সূরা এতো বার ঐ সূরা অত বার পড়তে হবে এমন কোন বাধা নাই । কোথাও উল্লেখ ও নাই ।
আল্লাহ বলেছেন সালাত আদায়ের সময় তার বান্দার পক্ষে যতখানি সম্ভব কুরআন থেকে তিলাওয়াত করা ততখানি করতে (73:20)

নারী-পুরুষের নামাযের পদ্ধতি

“নারী-পুরুষের নামাযের পদ্ধতি একই”
পুরুষ ও মহিলার নামাযের নিয়ম বা পদ্ধতি একই রকম। সুতরাং মহিলারাও একই তরীকায় নামায পড়বে, যেইরূ পুরুষেরা নামায পড়ে থাকে। কারণ, (নারী-পুরুষ উভয় জাতির) উম্মতকে সম্বোধন করে রসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা ঠিক সেইভাবে নামায পড়, যেইভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছ।”
সহীহ বুখারী, মুসলিম, মিশকাতঃ ৬৮৩নং।
আর উভয়ের নামায পৃথক হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীলও নেই।
সুতরাং যে আদেশ শরীয়ত পুরুষদেরকে করেছে, সে আদেশ মহিলাদের জন্যও এবং যে সাধারণ আদেশ মহিলাদেরকে করেছে তাও পুরুষদের ক্ষেত্রে পালনীয় -যদি বিশেষ হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার দলীল না থাকে। যেমন, “যারা সতী মহিলাদের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, অতঃপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদের জন্য শাস্তি হল ৮০ কোড়া---।” (কুরআন মাজীদ ২৪/৪) পরন্তু যদি কেউ কোন সৎ পুরুষকে অনুরুপ অপবাদ দেয়, তবে তার জন্যও ঐ একই শাস্তি প্রযোজ্য।
সুতরাং মহিলারাও তাদের নামাযে পুরুষদের মতই দুই হাত তুলবে, পিঠ লম্বা করে রুকূ করবে, সিজদায় জানু হতে পেট ও পায়ের রলাকে দূরে রেখে পিঠ সোজা করে সিজদাহ করবে। তাশাহ্‌হুদেও সেইরুপ বসবে যেইরুপ পুরুষেরা বসে। উম্মে দারদা (রাঃ) তাঁর নামাযে পুরুষের মতই বসতেন। আর তিনি একজন ফকীহ্‌ (বিদ্বান) ছিলেন।
ইমাম বুখারী রহঃ রচিত আত্‌-তারীখুস স্বাগীরঃ ৯৫পৃ, ইমাম ইবনে হাজার রহঃ রচিত সহিহ বুখারীর ব্যখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীঃ ২/৩৫৫।
আর মহিলাদের জড়োসড়ো হয়ে সিজদাহ করার ব্যাপারে কোন হাদীস সহীহ নেই।
ইমাম নাসিরউদ্দিন আলবানী রহঃ এর সিলসিলাহ যায়ীফাহঃ ২৬৫২ নং।
এজন্যই ইমাম ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ বলেন,
“নামাযে মহিলারা ঠিক তাই করবে, যেইরূপ পুরুষেরা করে থাকে।”
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৮৯পৃ:।
পক্ষান্তরে দলীলের ভিত্তিতেই নামাযের কিছু ব্যাপারে মহিলারা পুরুষদের থেকে ভিন্নরুপ আমল করে থাকে। যেমন:-
১. বেগানা পুরুষ আশে-পাশে থাকলে (জেহরী নামাযে) মহিলা সশব্দে কুরআন পড়বে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩০৪) যেমন সে পূর্ণাঙ্গ পর্দার সাথে নামায পড়বে। তাছাড়া একাকিনী হলেও তার লেবাসে বিভিন্ন পার্থক্য আছে।
২. মহিলা মহিলাদের ইমামতি করলে পুরুষদের মত সামনে না দাঁড়িয়ে কাতারের মাঝে দাঁড়াবে।
৩. ইমামের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে মহিলা পুরুষের মত ‘সুবহা-নাল্লাহ্‌’ না বলে হাততালি দেবে।
৪. মহিলা মাথার চুল বেঁধে নামায পড়তে পারে, কিন্তু (লম্বা চুল হলে) পুরুষ তা পারে না।
৫. অনেক মহিলা আছে, যারা মসজিদে বা বাড়িতে পুরুষদের নামায পড়া না হলে নামায পড়ে না, এটা ভুল। আযান হলে বা নামাযের সময় হলে ‘আওয়াল ওয়াক্তেই নামায পড়া মহিলারদের জন্য কর্তব্য।”
মুত্বাসাঃ ১৮৮-১৮৯পৃষ্ঠা।
রচয়িতা/ সঙ্কলকঃ শায়খ আবদুল হামীদ মাদানী ফাইযী।

ফরয সালাত শেষে কি দুয়া পড়তে হবে?

ফরয সালাত শেষে কি দুয়া পড়তে হবে?

বিসমিল্লাহ। ওয়ালহা'মদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ'লা রাসূলিল্লাহ। আম্মা বা'দ।
চলুন জেনে নেই ফরয নামাযে সালাম ফিরানোর পরে মাসনুন (রাসুলুল্লাহ সাঃ নিয়মিতকরতেন এমন সুন্নাহ) দুয়া ও যিকির কোনগুলি....

ফরযনামাযের পরের দুয়াগুলো যদি কেউ পড়ে তাহলে ফরয নামায শেষ করেই পড়তে হবে, অন্যান্যসুন্নত/নফল নামায পড়ে নয়। আর যিকিরগুলো আরবীতেই করতে হবে। উল্লেখ্য এই সময়মাথায়/কপালে হাত দিয়ে দুয়া করা যাবেনা, বা আকাশের দিকেও তাকানোর প্রয়োজন নেই।
এইদুয়াগুলো করা সুন্নত, ফরয নয়। তবে চেষ্টা করা উচিত, সবার নিজেদের সময় ও সাধ্য অনুযায়ীযতগুলো দুয়া সম্ভব হয় তার উপর আমল করা। যার পক্ষে যতগুলো সম্ভব ও ভালো লাগে।

রাসুলুল্লাহ(সাঃ) ফরয সালাত শেষকরে যেই দুয়াগুলো পড়তেনঃ
১. “আসতাগফিরুল্লা-হ” - ৩ বার ।

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ

অর্থঃ হে আল্লাহ!আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।

৩.“আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবা-রাকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম” – ১ বার। 

اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ، وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ

অর্থঃ হেআল্লাহ্‌! তুমি শান্তিময়, তোমারকাছ থেকেই শান্তি অবতীর্ণ হয়। তুমি বরকতময়, হে পরাক্রমশালী ও মর্যাদা প্রদানকারী।
সাওবান(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন “রাসুল (সাঃ) যখন সালাম ফেরাতেন তখন তিনি তিনবারইস্তেগফার পড়তে্ন অর্থাত ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলতেন। তারপর বলতেনঃ “আল্লাহুম্মাআনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতাইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম”।
মুসলিম১/২১৮, আবু দাউদ ১/২২১, তিরমিযী ১/৬৬।

৪.“লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দা’হু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকুওয়া লাহুল হা’মদু, ওয়া হুয়া আ’লা কুল্লি শাইয়িনক্বাদীর” - ১ বার। (মুসলিম ১২৪০)

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَـرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

৫. “আল্লাহুম্মা আ ই’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়াশুকরিকা ওয়া হু’সনি ইবাদাতিকা” – ১ বার। এই দুয়া ইচ্ছাকরলে নামাযের ভেতরে সিজদাতে বা সালাম ফেরানোর আগে দুয়া মাসুরার সময়ও করা যায়।

اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبادَتِكَ

অর্থঃ হেআল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার স্মরণ, তোমার কৃতজ্ঞতা এবং তোমার সুন্দর ইবাদত করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্যকর”।
এই দুয়াটাএতো গুরুত্বপূর্ণ যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এক সাহাবীকে এই দুয়া পড়ার জন্য বিশেষভাবেওয়াসীয়ত করে যান।
রাসুলুল্লাহ(সাঃ) মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) এর হাত ধরে বলেছিলেনঃ ‘‘হে মুয়াজ! আল্লাহর কসমআমি তোমাকে ভালোবাসি। অতঃপর তিনি বললেন, হে মুয়াজ! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যেতুমি প্রত্যেক সালাতের পর এই দুয়া করা ত্যাগ করবেনা, “আল্লাহুম্মাআ ই’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হু’সনি ইবাদাতিকা।”
আবু দাউদ১/২১৩, নাসায়ী, ইবেন হিব্বান, হাদীস সহীহ।

৬. আয়াতুল কুরসী (সুরা বাক্বারা আয়াতঃ ২৫৫)১ বার।
আবু উমামা(রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“যেব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী পাঠ করে মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই তাকেজান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারবেনা”।
নাসায়ী,ইবনু হিব্বান, হাদীস সহীহ।

এছাড়াও আরোঅন্যান্য অনেক দুয়া ও যিকির আছে ফরয নামাযের পরে – যার যার সামর্থ্য ও পছন্দনীয় সেইগুলো করবেন ইন শা’ আল্লাহ। আপনারা সহীহ দুয়াগুলো পাবেন “হিসনুল মুসলিম” বইয়ের “সালামফিরানোর পরের দুয়া” অধ্যায়ে ও রিয়াদুস সালেহীন বইয়ের “যিকির/দুয়া” অধ্যায়ে।

***তাসবীহ, তাহমীদও তাকবীরঃ
প্রত্যেক ফরযসালাতের পর মাসনুন অনেক দুয়া ও আমল আছে, তার মধ্যে বিশেষ একটা হলো তাসবীহ, তাহমীদও তাকবীরগুলো ৩৩ বার করে পড়া। যাদের জন্য ৩৩ বার করে পড়া কঠিন মনে হয় বা ৩৩ বারকরে পড়তে পারেন না, তারা ১০ বার করেও পড়তে পারেন, সুন্নতের মাঝে এটাও আছে।
নিঃসন্দেহে ৩৩ বারকরে পড়াই উত্তম ও সওয়াব অনেক বেশি। তাই যারা ৩৩ করে পড়তে পারেন তারা ৩৩ বার করেইপড়বেন। আর যারা ৩৩ বার পড়তে পারবেন না তারা অন্তত ১০বার মোট ৩০ বার পড়তে পারেন ইনশা' আল্লাহ।

***আমি ৩৩বার করেপড়া ও ১০ বার করে পড়ার হাদীসগুলো দিয়ে দিচ্ছিঃ

সুবহা’নাল্লাহ (৩৩বার) , আলহামদুলিল্লাহ (৩৩ বার), আল্লাহু-আকবার (৩৪ বার)। (মুসলিম ১/২১৯, তিরমিযী২/১৭৮)

# আবু হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার দরিদ্র মুহাজিররা রাসুলু্‌ল্লাহ (সাঃ) এর নিকটএসে বললেনঃ ধনবানরা তো সমস্ত বড় মর্যাদাগুলো দখল করে নিলেন এবং স্থায়ী নিয়ামতগুলোতাদের ভাগে পড়ল। আমরা যেমন নামায পড়ি তারাও তেমনি নামায পড়ে, আমরা যেমন রোযারাখি তারাও তেমনি রোযা রাখে, কিন্তু ধন-সম্পদের দিক থেকে তারা আমাদের অপেক্ষাঅগ্রসর। ফলে তারা হজ্জ করে, উমরা করে, আবার জিহাদ করে এবং সাদকাও করে। তিনি (সাঃ)বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এমন বস্তু শিক্ষা দেবো না? যার ওপর আমল করে তোমরা নিজেদেরঅপেক্ষা অগ্রবর্তীদেরকে ধরে ফেলবে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের থেকেও এগিয়ে যাবে,আর তোমাদের মতো ঐ আমলগুলো না করা পর্যন্ত কেউ তোমাদের অপেক্ষা অগ্রবর্তী হবে না।তারা বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! অবশ্যই বলে দিন। তিনি বললেনঃ তোমরা প্রত্যেকনামাযের পর ৩৩ বার তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর পড়ো। বর্ণনাকারী আবু সালিহ সাহাবী(রহঃ) আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যখন তাকে ঐ কালেমা গুলো পড়ারনিয়ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, তিনি বললেনঃ এ কালেমা গুলো সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন, “সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার” অবশেষে এপ্রত্যেকটি কালেমাই হবে ৩৩ বার। (বুখারী ও মুসলিম)।
ইমাম মুসলিমের হাদীসেআরও আছেযে, দরিদ্র মুহাজিরগণ পুনরায় রাসুল (সাঃ) এর খেদমতে হাযির হয়ে বললেন,আমরা যা কিছু করছিলাম আমাদের ধনী ভাইরা তা শুনে নিয়েছে এবং তারাও তা করতে শুরুকরেছে। রাসুল (সাঃ) বললেনঃ এটা হচ্ছে আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি তাদান করেন। হাদীসে উল্লেখিত “আদ-দাসূর” শব্দটি “দাসর”-এর বহুবচন। “দাসর” অর্থ“বিপুল ঐশ্বর্য”।

# আবু হুরাইরা(রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেকনামাযের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল হামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল্লাহুআকবার’ পড়ে এবং ১০০ বার পূর্ণ করার জন্য একবার “লা- ইলা- হা ইল্লাল্লা- হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িনকাদীর” পড়ে, তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনাপুঞ্জেরসমতুল্য হয়। (মুসলিম)।

# কা’ব ইবনে উজরাহ(রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, (নামাযের) পরে পঠিতকয়েকটি কালেমা এমন আছে যেগুলো পাঠকারী অথবা (বলেন) সম্পাদনকারী ব্যর্থ হয় না। সেকালেমাগুলো হচ্ছেঃ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ও ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’। (মুসলিম)।
বিঃদ্রঃ ১০০ বারপূরণ করার জন্য আল্লাহু আকবর ৩৪বার পড়া যেতে পারে অথবা আল্লাহু আকবর ৩৩বার পড়েশেষে একবার “লা- ইলা- হা ইল্লাল্লা- হু ওয়াহ দাহু লা- শারীকা লাহু লাহুল মুলকুওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর” পড়া যাবে। দুইটাই হাদীসেএসেছে, যেকোনো একটা করলে হবে।

১০বার করে পড়ারহাদীসঃ
'আবদুল্লাহ ইবনু'আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলমান ব্যক্তি দুইটি অভ্যাসে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হতে পারলে সেনিশ্চয়ই জান্নাতে প্রবেশ করবে। জেনে রাখ! উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো আয়ত্ত করা সহজ। সেঅনুসারে অনেক অল্প সঙ্খক লোকই টা আমল করে থাকে। (১) প্রতি ওয়াক্তের (ফরয) নামাযেরপর দশ বার সুবহানাল্লাহ, দশবার আলহামদুলিল্লাহ্ ও দশ বার আল্লাহু আকবার বলবে।'আবদুল্লাহ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমিনামাযের পর স্বীয় হস্তে গণনা করতে দেখেছি। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ (পাঁচ ওয়াক্তে) মুখের উচ্চারণে একশত পঞ্চাশবার এবংমীযানে (দাঁড়িপাল্লায়) দেড় হাজার হবে। (২) আর ঘুমাতে যাওয়ার সময় তুমি"সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ্ ও আল্লাহু আকবার এক শত বার বলবে (প্রথম দুটি৩৩ বার ও শেষের টি ৩৪ বার মোট ১০০) ফলে টা মীযানে এক হাজারে রূপান্তরিত হবে।তোমাদের মাঝে কে এক দিন ও রাতে দুই হাজার পাঁচশ গুনাহে লিপ্ত হয়? (অর্থাৎ এত গুলো পাপও ক্ষমা যোগ্য হবে);সাহাবীগণ বলেন, কোন ব্যক্তি সবসময় এরূপ একটি 'ইবাদাত কেন করবে না! রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ নামাযে অবস্থান থাকাকালেতার কাছে শয়তান এসে বলতে থাকে, এটা মনে কর, ওটা মনে কর। ফলে সেই নামাযী (শয়তানেরধোঁকাবাজি থাকা মাঝেই রত অবস্থায়) নামাযে শেষ করে। আর উক্ত তাসবিহ আমল করার সেসুযোগ পায়না। পুনরায় তোমাদের কেউ শোয়ার জন্য শয্যা গ্রহণ করতে শয়তান তার নিকটএসে তাকে ঘুম পাড়ায় এবং সে তাসবিহ পাঠ না করেই ঘুমিয়ে পড়ে।
হাদিসটিসহিহঃ ইবনু মাজাহ/৯২৬।

সুরাহ মুলক তেলাওয়াত করার ফযীলত

সুরাহ মুলক তেলাওয়াত করার ফযীলতঃ
প্রতিদিন সুরাহ মুলক তেলাওয়াত করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। অনেকে মনে করেন, সুরাহ মুলক শুধুমাত্র রাতের বেলাতেই পড়তে হবে, এটা ঠিক নয়। সুরাহ মুলক কেউ রাতের বেলা পড়লে সেটা উত্তম, তবে সুবিধামতো সময়ে দিনে বা রাতে, যেকোনো সময়েই তা পড়া যাবে। এই সুরার ফযীলত পাওয়ার জন্য হাদীসে যা বোঝানো হয়েছে হয়েছে তা হচ্ছে, এই সুরার দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা, সুরাটি মুখস্থ করা, এর অর্থ বোঝা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সুরাটি নিয়মতি পড়া। সুরাটি মুখস্থ করে সালাতে পড়তে পারেল ভালো। তবে মুখস্থ না থাকলে, সালাতের বাইরে দেখে দেখে পড়লেও এই সুরার পূর্ণ ফযীলত পাওয়া যাবে।
নাবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন সুরা মুলক পড়তেনঃ
জাবির রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত। “নাবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সুরাহ ‘আলিফ লাম মীম তানজিলুল কিতাব’ (সুরাহ আস-সাজদা) ও ‘তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলকু’ (সুরা মুলক) না পড়ে ঘুমাতেন না।”
হাদীসটি সহীহঃ তিরমিযী ২৮৯২, মুসনাদে আহমাদ ১৪৬৫৯, সুনানে দারেমি। তাহক্বীকঃ শায়খ শুয়া’ইব আরনাউত্ব বলেন, হাদীসটি সহীহ। শায়খ আহমাদ শাকির বলেন (হা/১৪৫৯৪) এর সানাদ সহীহ। বুখারীর ‘আদাবুল মুফরাদ’ নাসায়ীর ‘আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ’, সিলসিলাহ সহীহাহ হা/৫৮৫, শায়খ আলবানী বলেনঃ হাদীসটি সহীহ।
সুরাহ মুলক নিয়মিত পাঠ করলে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সুরাহ মুলক (তিলাওয়াতকারীকে) কবরের আজাব থেকে প্রতিরোধকারী।”
হাদীসটি হাসান সহীহঃ হাকিমঃ ৩৮৩৯, তাবাকাতে আসবাহানিয়্যিনঃ ২৬৪। ইমাম হাকিম ও ইমাম যাহাবী হাদীসটির সনদকে সহীহ বলেছেন। শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান সহীহ, সিলসিলাতুল আহাদীস সহীহাহঃ ১১৪০।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাতে ‘তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলকু’ (সুরাহ মুলক) পাঠ করবে এর মাধ্যমে মহীয়ান আল্লাহ তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন। সাহাবায়ি কিরাম বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর যামানায় এই সুরাটিকে আমরা ‘কবরের আজাব থেকে রক্ষাকারী আল-মানিআ’হ’ বা সুরক্ষাকারী বলতাম। সুরাহ মুলক মহান আল্লাহর কিতাবের এমন একটি সুরাহ, যে ব্যক্তি প্রতি রাতেই এই সুরাটি পাঠ করে সে অধিক করলো এবং অতি উত্তম কাজ করলো।”
হাদীসটি হাসান সহীহঃ সুনানে আন-নাসায়ী ৬/১৭৯। শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান সহীহ, সহীহ আত-তারগীব ওয়াল তারহীব ১৪৭৫, ইমাম হাকিম ও ইমাম যাহাবী হাদীসটির সনদকে সহীহ বলেছেন
সুরাহ মুলক পাঠ করলে কিয়ামতের দিন সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবেঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কুরআনে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট এমন একটি সুরাহ আছে, যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষা পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর সেটা হলো ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক’ (সুরাহ মুলক)।”
হাদীসটি হাসান সহীহঃ তিরমিযী ২৮৯১, সুনানে আবু দাউদ ১৪০০, ইবনে মাজাহ ৩৭৮৬, মুসনাদে আহমাদ। ইমাম তিরমিযী বলেছেন হাদীসটি হাসান, ইবনে তাইমিয়্যা বলেছেন সহীহ মাজমুঃ ২২/২২৭, শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি সহীহ, সহীহ তিরমিযী ৩/৬, সহীহ ইবনে মাজাহ ৩০৫৩।
সুরাহ মুলক তেলাওয়াত করা নিয়ে কিছু কথাঃ
এইখানে তেলাওয়াত করা মানে শুধু তোতা পাখির মতো রিডিং পড়ে যাওয়া না। এ প্রসংগে সউদী আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডের সম্মানিত আলেমদের ফতোয়া হচ্ছে, “(সুরা মুলক নিয়ে সবগুলো) হাদীসের আলোকে বলা যায় যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সুরাহ মুলক বিশ্বাস করবে এবং নিয়মিত তেলাওয়াত করবে, এই সুরাহ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং যে সুরাটিতে যে হুকুম-আহকাম দেওয়া আছে সেইগুলো মেনে চলবে, কেয়ামতের দিন তার জন্য এই সুরাটি শাফায়াত বা সুপারিশ করবে।” [ফতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহঃ ৪/৩৩৩, ৩৩৫]
সুতরাং, এই সুরাহটি নিয়মিত তেলাওয়াত করার পাশাপাশি, সুরাটির তর্জমা ও তাফসীর জানতে হবে, আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে। আল্লাহ তাআ’লা আমাদের সকলকে সেই তোওফিক দান করুন, আমিন।

ওযুর পরে সহীহ দুয়া ৩টি

ওযুর পরে সহীহ দুয়া ৩টি
১. ওযু শেষ করে কালিমা শাহাদাত একবার পড়তে হবে,
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ.
উচ্চারণঃ আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকা-লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে ওযু করবে এবং কালিমা শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। সে যেটা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে
মুসলিম ১/২০৯, মিশকাতঃ ২৮৯।
কালেমা শাহাদাত পড়ার সময় আকাশের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই, এ সম্পর্কিত হাদীস মুনকার বা যঈফ। [শায়খ আলবানী, ইরোয়াউল গালীল ১/১৩৫]
২. এছাড়া আরো একটি দুয়া পড়া যায়, যেমন
اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ.
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাজ আলনী মিনাত তাওয়্যাবীনা ওয়াজ আলনী মিনাল মুতা-ত্বাহহিরীন।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করো।
তিরমিযী ১/৭৯।
৩. ওযু শেষ করে ৩য় এই দুয়াটি পড়া সুন্নত
«سُبْحانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتوبُ إِلَيْكَ»
উচ্চারণঃ সুবহানাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লা আন্তা আস্তাগফিরুকা ওয়াআতূবু ইলাইকা।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার নিকট তওবা করছি।

নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, পৃ. ১৭৩। আরও দেখুন, ইরওয়াউল গালীল, ১/১৩৫, ৩/৯৪।

নামাযের রুকন, ওয়াজিব, সুন্নত ও নামায ভংগের কারণসমূহ

নামাযের রুকন, ওয়াজিব, সুন্নত ও নামায ভংগের কারণসমূহ
__________________________________
নামাযে রুকন হচ্ছে মোট ১৪টিঃ
১. সামর্থ্য থাকলে দাঁড়িয়ে নামায পড়া।
২. তাকবীরে তাহরীমাহ অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে নামায শুরু করা।
৩. প্রত্যেকে রাকাতেই সুরা ফাতিহা পাঠ করা।
৪. রুকু করা।
৫. রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
৬. (দুই হাত, দুই পা, দুই হাঁটু ও মুখমন্ডল এই) সাতটি  অঙ্গের উপর সিজদা করা।
৭. সিজদা হতে উঠা।
৮. দুই সিজদার মাঝখানে পিঠ সোজা করে বসা।
৯. শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু...) পড়া।
১০. তাশাহ্হুদ পড়ার সময় বসে থাকা।
১১. নামাযের এই রুকনগুলো ধীর ও স্থিরতার সাথে সম্পাদন করা।
১২. এই রুকনগুলো ধারাবাহিকভাবে একটার পর একটা আদায় করা।
১৩. (শেষ বৈঠকে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ করা।
১৪. ডানে ও বামে দুই দিকে সালাম প্রদান করা বা সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করা।
__________________________________
নামাযের ওয়াজিব (বা ফরয) হচ্ছে মোট ৮টিঃ
১. তাকবীরে তাহরীমার তাকবীর ছাড়া নামাযে অন্যান্য তাকবীর সমূহ (আল্লাহু আকবার) বলা।
২. سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ) বলা। আর ইহা ইমাম ও একাকী নামায আদায় কারীর জন্য ওয়াজিব। তবে মুক্তাদী তা পাঠ করবে না। (অবশ্য একদল আলেমের মতে মুক্তাদীও তা পড়তে পারে।)
৩. ইমাম, মুক্তাদী ও একাকী নামায আদায় কারী সকলের উপর رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ (রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ) সকলের জন্যে বলা ওয়াজিব।
৪. রুকুতে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ (সুব্হানা রাব্বিয়াল আজীম) বলা।
৫. সিজদায় سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা) বলা।
৬. দুসিজদার মাঝে رَبِّ اغْفِرْلِي   (রাব্বিগ ফিরলী) বলা।
৭. প্রথম বৈঠকে তাহিয়্যাত (আত্তাহিয়্যাতু...) পড়া। 
৮. প্রথম বৈঠকের জন্য বসা
__________________________________
নামাযের সুন্নাত সমূহ হচ্ছেঃ
১. সানা বা প্রারম্ভিক দুআ পাঠ করা।
২. ডান হাতকে বাম হাতের উপর করে দাঁড়ানো অবস্থায় রুকুর পূর্বে ও পরে বুকের উপর রাখা।
৩. দুই হাতের আঙ্গুল মিলিত ও দণ্ডয়মান অবস্থায় অবস্থায় কাধঁ অথবা দুই কানের লতি পর্যন্ত তুলে ইশারা করা, তাকবীরাতুল ইহরামের সময়, রুকু করার সময়, রুকুহতে উঠার সময় ও প্রথম বৈঠক হতে তৃতীয় রাকাআতের জন্যে দাঁড়ানের সময়।
৪. রুকু ও সিজাদার তাসবীহ সমূহের একের অধিকবার পাঠ করা।
৫. দুই সিজদার মাঝে মাগফিরাত বা ক্ষমার জন্য দুআ একবারের অধিক পাঠ করা।
৬. রুকুতে মাথাকে পিঠের বরাবর বা সমান্তরাল রাখা।
৭. সিজদারত অবস্থায় দুই হাতকে পার্শদ্বয় হতে, পেটকে উরুদ্বয় হতে ও উরুদ্বয়কে পায়ের নলীদ্বয় হতে দূরে রাখা।
৮. (নারী ও পুরুষের উভয়ের জন্য) সিজদার সময় জমিন হতে দুই হাতকে উঁচু করে রাখা।
৯. প্রথম বৈঠকে ও দুই সিজাদার মাঝখানে ডান পা খাড়া রেখে বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা। (প্রথম বৈঠকে পুরুষদের মতো করে বসা, নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সুন্নাহ)। 
১০. তিন ও চার রাকআত বিশিষ্ট নামাযের শেষ বৈঠকে তাওয়াররুক করা। তাওয়াররুকের নিয়ম হল, বাম পা কে ডান পায়ের নলীর নিচে রাখা, অতঃপর ডান পায়ের পাতা খাড়া রেখে নিতম্বের উপর বসা। (দ্বিতীয় বৈঠকে নারীদের মতো করে বসা, নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সুন্নাহ)।
১১. প্রথম ও দ্বিতীয় বৈঠকে তাশাহুদের বসার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শাহাদত আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করা ও দুআর সময় নড়ানো।
১২. প্রথম বৈঠকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার পরিবারের উপর এবং ইব্রাহীম ও ইব্রাহীম আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালামের  পরিবারের উপর সলাত ও বরকত বর্ষণ করা।  অর্থাৎ, ২টি বৈঠকের নামাযের প্রথম বৈঠকে দুরুদে ইবরাহীম পাঠ করা সুন্নাহ।
১৩. শেষ বৈঠকে দুআ মাসুরা পড়া।
১৪. ফজরের নামাযে, জুমুআর নামাযে, দুই ঈদের নামাযে, বৃষ্টি প্রার্থনার নামাযে এবং মাগরিব ও এশার নামাযের প্রথম দুই রাকআত ফরয নামাযে উচ্চ স্বরে সুরা-ক্বিরাত পাঠ করা।
১৫. যুহর, আসর ও মাগরিবের তৃতীয় রাকআতে এবং এশার সলাতের শেষ দুই রাকআতে চুপিস্বরে সুরা-ক্বিরাত পাঠ করা।
১৬. সূরা ফাতিহা পড়ার পর ক্বুরআনের অন্য স্থান থেকে (সুরা বা আয়াত) পাঠ করা।
নামাযের যে সুন্নাতগুলো আমরা উল্লেখ করেছি, তা ছাড়াও হাদীসে বর্ণিত অন্যান্য সুন্নাতগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। যেমন- ইমাম, মুক্তাদী ও একা একা সলাত আদায়কারীর রুকু হতে উঠে রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু এর অতিরিক্ত দুয়া পাঠ করা, এটি সুন্নাত। আরও তার (নামাযের সুন্নাতের) অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে, রুকুর সময় দুই হাতের অঙ্গুলগুলো ছাড়ানো বা আলাদা অবস্থায় রেখে দুই হাঁটুকে মজবুতভাবে আকড়ে ধরা। আরো হচ্ছে, সিজদার সময় অঙ্গুলগুলো মিলিত রাখা, নাক মাটিতে লাগিয়ে রাখা. . .ইত্যাদি।
__________________________________
যে সকল কারণে নামায নষ্ট হয়, সেগুলো হচ্ছে মোট ৮টিঃ
১. নামাযে মাসলাহাতের (কল্যাণ মূলক) বহির্ভূত এমন বিষয়ে স্বরণ ও জানা থাকা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বলা। তবে মনের ভুলে অথবা কোন মূর্খ ব্যাক্তি না জেনে কথা বলে ফেললে, তার নামায বাতিল হবে না।
২.  নামাযে উচ্চস্বরে হাসা। তবে সামান্য মুচকি হাসা যা দেখে কেউ বুঝতে ন আপারে তবে তার কারনে নামায ভাংবেনা।
৩. নামাযের ভেতরে কোন কিছু খাওয়া।
৪. নামাযের ভেতরে কোন কিছু পান করা।
৫. নামায চলাকালীন সময় আওরাহ বা লজ্জাস্থান প্রকাশিত হওয়া।
৬. সলাতে ধারাবাহিকভাবে অনেক বেশী বেহুদা বা অনর্থক কাজ করা। (আর অধিক কাজের পরিমাণ নির্ণয় করার মানদণ্ড হল, কেউ তার দিকে তাকালে মনে হবে যেন, সে নামাযের মাঝে নয়)।
৭.  ক্বিবলার দিক থেকে ডান বা বাম দিকে অনেক বেশি সরে যাওয়া।
৮. নামাযের ভেতরে সালাম ফেরানোর পূর্বে যেকোণ সময়ে অযু ভেঙ্গে যাওয়া।
মূল উৎসঃ সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পাঠ সমূহ
লেখকঃ ইমাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ)।