Wednesday, July 29, 2015

ছালাত পরবর্তী দুয়া ও যিকর সমূহ

ছালাত পরবর্তী দুয়া ও যিকর সমূহ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহ।
আমাদের সমাজে দেখা যায়ফরজ নামায হয়ে গেলে ইমাম-মুক্তাদীগণ সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করে থাকেন।  অথবা শুরু হয় বেদাআতী পদ্ধতি সম্মিলিত জিকির। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সকল দুয়া ও জিকির নিয়মিত পাঠ করতেন সেগুলোর কোন গুরুত্ব নাই। ইমাম সাহেব নিজেও এসব দুয়া ও জিকিরগুলো পাঠ করেন না, মুসল্লীদেরকেও শেখান না বা পড়তে উৎসাহিত করেন না।  তাইতো বলা হয়, সুন্নত যেখান থেকে উঠে যায় বেদআত সেখানে জায়গা দখল করে। আর আমাদের সমাজে এটাই হয়েছে। আল্লাহ যেন আমাদেরকে বিদআত বর্জন করে সুন্নত অনুসরণ করার তাওফীক দান করেন। আমীন।
সহীহ সুন্নাহ থেকে ফরজ সালাত সমাপান্তে ইমাম-মুক্তাদী সবার জন্য পঠিতব্য দুয়া ও জিকির সমূহ উপস্থাপন করা হল:
(1) اَللهُ أَكْبَرُ، أَسْتَغْفِرُ اللهَ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ-
উচ্চারণ : ১. আল্লা-হু আকবার (একবার সরবে)। আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ (তিনবার)।
অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।[173]
(2) اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَ الْإِكْرَامِ.
২. আল্লা-হুম্মা আন্তাস্ সালা-মু ওয়া মিন্কাস্ সালা-মু, তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিকএটুকু পড়েই ইমাম উঠে যেতে পারেন। [174]
এই সময় তিনি তাঁর স্থান থেকে একটু সরে গিয়ে সুন্নাত পড়বেন, যাতে দুই স্থানের মাটি ক্বিয়ামতের দিন তার ইবাদতের সাক্ষ্য দেয়। যেমন আল্লাহ বলেন, يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا ক্বিয়ামতের দিন মাটি তার সকল বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে।[175]
(3) لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، لاَحَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إلاَّ بِاللهِ- اَللَّهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَى ذِكْرِكَ وَ شُكْرِكَ وَ حُسْنِ عِبَادَتِكَ، اَللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ-
৩. লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর; লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ (উঁচুস্বরে)।[176] আল্লা-হুম্মা আইন্নী আলা যিকরিকা ওয়া শুক্রিকা ওয়া হুসনে ইবা-দাতিকা। আল্লা-হুম্মা লা মা-নেআ লেমা আত্বায়তা অলা মুত্বিয়া লেমা মানাতা অলা ইয়ান্ফাউ যাল জাদ্দে মিন্কাল জাদ্দু।
অর্থ : নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত, যিনি একক ও শরীকবিহীন। তাঁরই জন্য সকল রাজত্ব ও তাঁরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী। নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি, আল্লাহ ব্যতীত।[177] হে আল্লাহ! আপনাকে স্মরণ করার জন্য, আপনার শুকরিয়া আদায় করার জন্য এবং আপনার সুন্দর ইবাদত করার জন্য আমাকে সাহায্য করুন।[178] হে আল্লাহ! আপনি যা দিতে চান, তা রোধ করার কেউ নেই এবং আপনি যা রোধ করেন, তা দেওয়ার কেউ নেই। কোন সম্পদশালী ব্যক্তির সম্পদ কোন উপকার করতে পারে না আপনার রহমত ব্যতীত। [179]
(4) رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَّبِالْإِسْلاَمِ دِيْنًا وَّبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا-
৪. রাযীতু বিললা-হে রববাঁও ওয়া বিল ইসলা-মে দীনাঁও ওয়া বিমুহাম্মাদিন্ নাবিইয়া।
অর্থ: আমি সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম আল্লাহর উপরে প্রতিপালক হিসাবে, ইসলামের উপরে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদের উপরে নবী হিসাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এই দোআ পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।[180]
(5) اَللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُبِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ الْبُخْلِ وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ أَرْذَلِ الْعُمُرِ وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَ عَذَابِ الْقَبْرِ-
৫. আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল জুব্নে ওয়া আঊযুবিকা মিনাল বুখ্লে ওয়া আঊযুবিকা মিন আরযালিল উমুরে; ওয়া আঊযুবিকা মিন্ ফিৎনাতিদ দুন্ইয়া ওয়া আযা-বিল ক্বাবরে।
অর্থঃ হে আল্লাহ! (১) আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি ভীরুতা হতে (২) আশ্রয় প্রার্থনা করছি কৃপণতা হতে (৩) আশ্রয় প্রার্থনা করছি নিকৃষ্টতম বয়স হতে এবং (৪) আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুনিয়ার ফিৎনা হতে ও (৫) কবরের আযাব হতে।[181]
(6) اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
৬. আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল হাম্মে ওয়াল হাযানে ওয়াল আজঝে ওয়াল কাসালে ওয়াল জুবনে ওয়াল বুখলে ওয়া যালাইদ দায়নে ওয়া গালাবাতির রিজা-লে।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ-বেদনা হতে, অক্ষমতা ও অলসতা হতে, ভীরুতা ও কৃপণতা হতে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের যবরদস্তি হতে।[182]
(7) سُبْحَانَ اللهِ وَ بِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَ رِضَا نَفْسِهِ وَ زِنَةَ عَرْشِهِ وَ مِدَادَ كَلِمَاتِهِ-
৭. সুবহা-নাল্লা-হে ওয়া বেহাম্দিহী আদাদা খাল্ক্বিহী ওয়া রিযা নাফ্সিহী ওয়া ঝিনাতা আরশিহী ওয়া মিদা-দা কালেমা-তিহ (৩ বার)।
অর্থ : মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য। তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার সমপরিমাণ, তাঁর সত্তার সন্তুষ্টির সমপরিমাণ এবং তাঁর আরশের ওযন ও মহিমাময় বাক্য সমূহের ব্যাপ্তি সমপরিমাণ।[183]
(8) يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِيْنِكَ، اَللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ-
৮. ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূবে ছাবিবত ক্বালবী আলা দ্বীনিকা, আল্লা-হুম্মা মুছারিরফাল কবুলূবে ছাররিফ ক্বুলূবানা আলা ত্বোয়া-আতিকা।
অর্থ : হে হৃদয় সমূহের পরিবর্তনকারী! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখোহে অন্তর সমূহের রূপান্তরকারী! আমাদের অন্তর সমূহকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দাও।[184]
(9) اَللَّهُمَّ أَدْخِلْنِىْ الْجَنَّةَ وَ أَجِرْنِىْ مِنَ النَّارِ-
৯. আল্লা-হুম্মা আদখিলনিল জান্নাতা ওয়া আজিরনী মিনান্ না-র (৩ বার)।
অর্থ : হে আল্লাহ তুমি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ দাও! [185]
(10) اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى-
১০. আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াত তুক্বা ওয়াল আফা-ফা ওয়াল গিণা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে সুপথের নির্দেশনা, পরহেযগারিতা, পবিত্রতা ও সচ্ছলতা প্রার্থনা করছি।[186]
(11) سُبْحَانَ اللهِ، اَلْحَمْدُ ِللهِ، اَللهُ أَكْبَرُ، لآ إلهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٌ-
১১. সুবহা-নাল্লা-হ (৩৩ বার)। আলহাম্দুলিল্লা-হ (৩৩ বার)। আল্লাহু-আকবার (৩৩ বার)। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ; লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া আলা কুল্লে শাইয়িন ক্বাদীর (১ বার)। অথবা আল্লা-হু আকবার (৩৪ বার)।
অর্থ : পবিত্রতাময় আল্লাহ। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। নেই কোন উপাস্য একক আল্লাহ ব্যতীত; তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব ও তাঁরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী।[187]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর উক্ত দোআ পাঠ করবে, তার সকল গোনাহ মাফ করা হবে। যদিও তা সাগরের ফেনা সমতুল্য হয়। [188] অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি আয়েশা ও ফাতেমা (রাঃ)-কে বলেন, তোমরা এ দোআটি প্রত্যেক ছালাতের শেষে এবং শয়নকালে পড়বে। এটাই তোমাদের জন্য একজন খাদেমের চাইতে উত্তম হবে।[189]
(12) سُبْحَانَ اللهِ وَ بِحَمْدِهِ ، سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ-
১২. সুব্হা-নাল্লা-হি ওয়া বিহাম্দিহী, সুব্হা-নাল্লা-হিল আযীম। অথবা সকালে ও সন্ধ্যায় ১০০ বার করে সুবহা-নাল্লা-হে ওয়া বেহামদিহী পড়বে।
অর্থ : মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য। মহাপবিত্র আল্লাহ, যিনি মহান। এই দোআ পাঠের ফলে তার সকল গোনাহ ঝরে যাবে। যদিও তা সাগরের ফেনা সমতুল্য হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই দোআ সম্পর্কে বলেন যে, দুটি কালেমা রয়েছে, যা রহমানের নিকটে খুবই প্রিয়, যবানে বলতে খুবই হালকা এবং মীযানের পাল্লায় খুবই ভারী। তা হল সুব্হা-নাল্লা-হি.।[190] ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর জগদ্বিখ্যাত কিতাব ছহীহুল বুখারী উপরোক্ত হাদীছ ও দোআর মাধ্যমে শেষ করেছেন।
(13) اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-
১৩. আয়াতুল কুরসী : আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম। লা তাখুযুহু সেনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতে ওয়ামা ফিল আরয। মান যাল্লাযী ইয়াশফাইন্দাহূ ইল্লা বিইয্নিহি। ইয়ালামু মা বায়না আয়দীহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহীতূনা বিশাইয়িম্ মিন ইল্মিহী ইল্লা বিমা শা-আ; ওয়াসেআ কুরসিইয়ুহুস্ সামা-ওয়া-তে ওয়াল আরয; ওয়ালা ইয়াউদুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল আলিইয়ুল আযীম (বাক্বারাহ ২/২৫৫)।
অর্থ : আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোন তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে যে তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসী[191] সমগ্র আসমান ও যমীন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলির তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক ফরয ছালাত শেষে আয়াতুল কুরসী পাঠকারীর জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আর কোন বাধা থাকে না মৃত্যু ব্যতীত (নাসাঈ)। শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হেফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযু্ক্ত থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হতে না পারে (বুখারী)। [192]
(14) اَللَّهُمَّ اكْفِنِيْ بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَ أَغْنِنِىْ بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ-
১৪. আল্লা-হুম্মাক্ফিনী বেহালা-লেকা আন হারা-মেকা ওয়া আগ্নিনী বেফায্লেকা আম্মান সেওয়া-কা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হারাম ছাড়া হালাল দ্বারা যথেষ্ট করুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে অন্যদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন করুন! রাসূল (ছাঃ) বলেন, এই দোআর ফলে পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকলেও আল্লাহ তার ঋণ মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন।[193]
(15) أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لآ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَ أَتُوْبُ إِلَيْهِ-
১৫. আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহে
অর্থ : আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে তাঁর দিকে ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি। এই দোআ পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়।[194] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দৈনিক ১০০ করে বার তওবা করতেন।[195]
১৬. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রত্যেক ছালাতের শেষে সূরা ফালাক্ব নাস পড়ার নির্দেশ দিতেন।[196] তিনি প্রতি রাতে শুতে যাওয়ার সময় সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পড়ে দুহাতে ফুঁক দিয়ে মাথা ও চেহারাসহ সাধ্যপক্ষে সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। তিনি এটি তিনবার করতেন। [197]
_________________________________________________________________________
Reference……….
[173] . মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৯৫৯, ৯৬১ ছালাত পরবর্তী যিকর অনুচ্ছেদ-১৮।
[174] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬০। উল্লেখ্য যে, শায়খ জাযারী বলেন, এই সাথে ইলায়কা ইয়ারজিউস সালাম, হাইয়েনা রববানা বিস সালা-ম, ওয়া আদখিলনা দা-রাকা দা-রাস সালাম…’-বৃদ্ধি করার কোন ভিত্তি নেই। এটি কোন গল্পকারের সৃষ্টি। -মিশকাত আলবানী হা/৯৬১-এর টীকা দ্র:।
[175] . যিলযাল ৯৯/৪; নায়ল ৪/১০৯-১০ পৃঃ।
[176] . সালাম ফিরানোর পরে রাসূল (ছাঃ) এটুকু তাঁর সর্বোচ্চ স্বরে পড়তেন। মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৩।
[177] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৩, ছালাত অধ্যায়-৪, ছালাতের পর যিকর অনুচ্ছেদ-১৮।
[178] . আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৯৪৯।
[179] . মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯৬২।
[180] . আবুদাঊদ হা/১৫২৯, ছালাত অধ্যায়-২, ক্ষমা প্রার্থনা অনুচ্ছেদ-৩৬১।
[181] . বুখারী, মিশকাত হা/৯৬৪।
[182] . মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৪৫৮ দোআ সমূহ অধ্যায়-৯, আশ্রয় প্রার্থনা অনুচ্ছেদ-৮।
[183] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৩০১ দোআ সমূহ অধ্যায়, তাসবীহ ও হামদ পাঠের ছওয়াব অনুচ্ছেদ-৩; আবুদাঊদ হা/১৫০৩।
[184] . তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১০২ ঈমান অধ্যায়-১, তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাস অনুচ্ছেদ-৩; মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯।
[185] . তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/২৪৭৮ দোআ সমূহ অধ্যায়-৯, আশ্রয় প্রার্থনা অনুচ্ছেদ-৮।
[186] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৪৮৪ দোআ সমূহ অধ্যায়-৯, সারগর্ভ দো অনুচ্ছেদ-৯।
[187] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৬, ৯৬৭, ছালাত অধ্যায়-৪, ছালাত পরবর্তী যিকর অনুচ্ছেদ-১৮।
[188] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৭।
[189] . মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৮৭-৮৮ দোআ সমূহ অধ্যায়-৯, সকালে, সন্ধ্যায় ও শয়নকালে কি দোআ পড়তে হয় অনুচ্ছেদ- ৬।
[190] . মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২২৯৬-৯৮, দোআ সমূহ অধ্যায়-৯, তাসবীহ, তাহমীদ, তাহলীল ও তাকবীর পাঠের ছওয়াব অনুচ্ছেদ-৩; বুখারী হা/৭৫৬৩ তাওহীদ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৮।
[191] . ইবনু কাছীর বলেন, সঠিক কথা এই যে, কুরসী ও আরশ পৃথক বস্ত্ত এবং আরশ কুরসী হতে বড়, বিভিন্ন হাদীছ ও আছার থেকে যা প্রমাণিত হয় (, তাফসীর)। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, কুরসীর তুলনায় সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী ময়দানে পড়ে থাকা একটি ছোট লোহার বেড়ীর ন্যায়। আরশের তুলনায় কুরসী একই রূপ ছোট হিসাবে গণ্য। ইবনু কাছীর, তাফসীর বাক্বারাহ ২/২৫৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৯।
[192] . নাসাঈ কুবরা হা/৯৯২৮, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭২; মিশকাত হা/৯৭৪, ছালাত অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-১৮; মুসলিম, বুখারী, মিশকাত হা/২১২২-২৩ কুরআনের ফাযায়েল অধ্যায়-৮।
[193] . তিরমিযী, বায়হাক্বী (দাওয়াতুল কাবীর), মিশকাত হা/২৪৪৯, দোআ সমূহ অধ্যায়-৯, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দো অনুচ্ছেদ-৭ ; ছহীহাহ হা/২৬৬।
[194] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৩৫৩ দোআসমূহ অধ্যায়-৯, ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা অনুচ্ছেদ-৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭২৭।
[195] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫ ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা অনুচ্ছেদ-৪।
[196] . আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৯৬৯, ছালাত অধ্যায়-৪, ছালাত পরবর্তী যিকর অনুচ্ছেদ-১৮।
[197] . মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২১৩২ কুরআনের ফাযায়েল অধ্যায়-৮।
(সংকলিত)


টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়ার ভয়াবহতা

টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়ার ভয়াবহতা
আবু যর রা. বলেন, রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির সাথে কথা তো বলবেনই না বরং তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না। এমনকি তিনি তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না  বরং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারা কারা? তবে এরা তো ধ্বংশ, তাদের বাঁচার কোন রাস্তা নাই। রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম- এ কথা তিনবার বলেছেন। তারা হলঃ
১) যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরে।
২) যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম খেয়ে ব্যাবসার পণ্য বিক্রি করে।
৩) যে ব্যক্তি কারো উপকার করে আবার খোটা দেয়। (মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইব্‌ন মাজাহ্‌)।
আবু হুরায়রা নবী -সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম- থেকে বর্ণনা করে বলেন, লুঙ্গির যে অংশ টাখনুর নিচে থাকবে তা আগুনে প্রজ্জলিত হবে। (বুখারী)
জাবের ইব্‌ন সুলাইম রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পড়ার ব্যাপারে সাবধান হও। কারণ, তা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ অহংকার করাকে পছন্দ করেন না। (আবু দাঊদ। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)।
ইব্‌ন বায এবং ইব্‌ন উছাইমীন (রাহ.) এর ফাতওয়া
ইব্‌ন বায (রাহ.) বলেন, যে কোন অবস্থায় টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়াকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অহংকারের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। কারণ, তিনি বলেন, টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়া থেকে সাবধান! কারণ তা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত। এখানে তিনি বিশেষ কোন অবস্থাকে বাদ দেন নি। সুতরাং যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরবে সে এ শাস্তির আওতায় চলে আসবে। চাই তা পায়জামা হোক বা লুঙ্গি, কুর্তা বা অন্য কোন পোশাক। কোন পোশাকের ক্ষেত্রেই টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পড়ার সুযোগ নেই।
মুহাম্মাদ ইব্‌ন সালেহ আল উছাইমীন (রাহ.) বলেন, অহংকার বশতঃ যে ব্যক্তি লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পড়বে তার শাস্তি হল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার সাথে কথা তো বলবেনই না বরং তার দিকে তাকিয়েও দেখবেন না। এমনকি তিনি তাকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না  বরং তার জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি আর যদি অহংকার বশতঃ ঝুলিয়ে পরে তাবে তার শাস্তি হল, সে যতটুকু কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরেছিল ততটুকু আগুনে প্রজ্জলিত হবে।
(তথ্যসূত্রঃ ফাতওয়া আল বালাদুল হারাম, ১৫৪৭, ১৫৪৯, ১৫৫০ নং পৃষ্ঠা)


দৃষ্টি সংযত রাখার উপায় সমূহ

দৃষ্টি সংযত রাখার উপায় সমূহ

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যে। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ এবং সাহাবাগণের উপর।
সাধারণ ভাবে সকল মানুষ এবং বিশেষ ভাবে যুবক ও অবিবাহিতরা সবচেয়ে বড় যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তাহলো অপরিচিতা মহিলার প্রতি দৃষ্টি প্রদান করা। তারা এই বিপদের সম্মুখীন সকল জায়গাতেই হচ্ছে। হাটে-বাজারে, হাসপাতালে, বিমানবন্দরে, এমন কি পবিত্র জায়গা গুলোতেও এ বিপদ থেকে মুক্ত নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
: مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ
“আমার পরে পুরুষের জন্যে মহিলাদের চেয়ে অধিক ক্ষতিকারক কোন ফিতনা রেখে যাই নি।” (বুখারী মুসলিম) তিনি আরও বলেছেন:
إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللَّهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّساء
“নিশ্চয়ই এই দুনিয়া হচ্ছে সবুজ-শ্যামল, সুমিষ্ট। আল্লাহ তা’আলা ইহাতে তোমাদেরকে খলীফা (প্রতিনিধি) নিযুক্ত করেছেন এই জন্যই যে, তিনি দেখতে চান তোমরা কি আমল কর। অতএব তোমরা দুনিয়ার ফিতনা হতে বাঁচ এবং মহিলাদের ফিতনা থেকেও বেঁচে থাক। কেননা বনী ইসরাইলের মধ্যে সর্ব প্রথম যে ফিতনা (বিপদ) দেখা দিয়েছিল তা ছিল মহিলার ফিতনা।” (মুসলিম)
নিম্নে দৃষ্টি সংযত রাখার কতিপয় উপায় পেশ করা হল যা উক্ত বিপদজনক ফিতনা থেকে রক্ষা  করতে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ:
১) দৃষ্টি অবনত রাখা: হারাম বা নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ না করার ব্যাপারে রয়েছে বহু আয়াত ও হাদীস : যেমন,
  • আল্লাহ তা’আলা বলেন:
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ
“মু’মিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জা স্থানের হেফাজত করে, এটা তাদের জন্যে পবিত্রতম; তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ অবিহিত।” (সূরা নূর: ৩০)।
  • নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنْ الزِّنَا أَدْرَكَ ذَلِكَ لَا مَحَالَةَ فَزِنَا الْعَيْنَيْنِ النَّظَرُ وَزِنَا اللِّسَانِ النُّطْقُ وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِي وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ أَوْ يُكَذِّبُه
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের উপর জেনার একটা অংশ অবধারিত করে দিয়েছেন। নিশ্চিতভাবে তা সে পাবে। সুতরাং চোখের জিনা হল দৃষ্টি দেয়া। জিহ্বার জিনা হল কথা বলা। আর অন্তর কামনা করে। লজ্জা স্থান তা সত্যে পরিণত করে, অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।” অর্থাৎ লজ্জা স্থানের দ্বারা কেউ অশ্লীলতায় লিপ্ত হয় আবার কেউ তা থেকে বিরত থাকে। (বুখারী মুসলিম)।
  • সাহাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা:) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মহিলার প্রতি হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন:
“তুমি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখ।” (মুসলিম ও আবু দাউদ)
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী (রা:) কে লক্ষ্য করে বলেছেন:  
يَا عَلِيُّ لَا تُتْبِعْ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ فَإِنَّ لَكَ الْأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الْآخِرَة
“হে আলী তুমি অপরিচিতা মহিলার প্রতি বার বার দৃষ্টি ফেলিও না। কেননা তোমার জন্যে প্রথমবার  বৈধ হলেও দ্বিতীয় বার বৈধ নয়।” (তিরমিযী) হাদীসে উল্লেখিত প্রথমবার দৃষ্টি বৈধ হওয়ার উদ্দেশ্য হল, অনিচ্ছাকৃত বা হঠাৎ যেই দৃষ্টি পড়ে যায়; ইচ্ছাকৃত দেখা নয়।
২) আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করা এবং তাঁর সম্মুখে নিজেকে উপস্থিত রাখা:
এই কঠিন ফিতনা থেকে নিজেকে বাঁচানো ও হেফাজতে রাখার ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলার কাছে বার বার প্রার্থনা করা।
  • মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে কুদসীতে এসেছে:
يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ
“হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট, কিন্তু আমি যাকে হেদায়েত দেই সে নয়। সুতরাং আমার কাছে হেদায়েত চাও আমি তোমাদেরকে হেদায়েত দিব।” (মুসলিম)
  • আল্লাহ তা’আলা বলেন:
”এবং যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে, তখন তাদেরকে বলে দাও: নিশ্চয়ই আমি সন্নিকট বর্তী। কোন আহ্বানকারী যখনই আমাকে আহবান করে তখনই আমি তার আহবানে সাড়া দিয়ে থাকি। সুতরাং তারাও যেন আমার আহবানে সাড়া দেয় এবং আমাকে বিশ্বাস করে, তাহলেই তারা সঠিক পথে চলতে পারবে।” (সূরা বাকারাঃ ১)
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দুয়াতে বলতেন:
للَّهُمَّ اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا يَحُولُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيكَ
“হে আল্লাহ আমাদের অন্তঃকরণে আপনার ভয় দান করুন, যা আমাদের এবং আপনার নিষিদ্ধ পাপকাজের মাঝে প্রতিবন্ধক হবে।”
  • রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুয়াতে আরও বলতেন:
للَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي
উচ্চারণ: (আল্লাহম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন শাররি সাময়ী, ওয়া মিন র্শারি বাছারী, ওয়া মিন র্শারি লিসানী, ওয়া মিন র্শারি ক্বলবী।)
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আমার কর্ণ, আমার চক্ষু, আমার জিহ্বা এবং আমার অন্তরের অনিষ্ট থেকে পরিত্রাণ চাই।” (আবু দাউদ)। আল্লামা আলবানী (র:) অত্র হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন।)
৩) সকল অবস্থায় আমাদেরকে পর নারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়ার ব্যাপারে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার চেষ্টা করতে হবে:
কেননা সর্বাবস্থায়, সর্ব ক্ষেত্রে ও সকল সময় হারামে পতিত হওয়া থেকে দৃষ্টি সংযত রাখা আবশ্যক। সুতরাং বাতিল দ্বারা দলীল সাব্যস্ত করার অধিকার তোমার নেই এবং এই বলেও তুমি নিজেকে পাক বলে দাবী করিও না যে, বর্তমানে চলমান কুপ্রথা আমাকে এই ভয়াবহ বিপদের প্রতি আহবান করছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْراً أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَه فَقَدْ ضَلَّ ضَلالاً مُبِينا
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফায়সালা করলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিন নারীর নিজেদের কোন ব্যাপারে অন্য কোন সিদ্ধান্তের ইখতিয়ার থাকবে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।”(সূরা আহযাব ৩৬)
৪) আল্লাহ তা’আলা আমাদের সম্পর্কে অবগত আছেন এবং তাঁর জ্ঞান দ্বারা আমরা পরিপূর্ণভাবে পরিবেষ্টিত। তাই তাঁর থেকে লজ্জা করা আবশ্যক:
  • আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْأِنْسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ
“আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবা স্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।”(সূরা ক্বাফঃ ১৬)
  • আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন:
يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُور
“চোখের চুরি এবং অন্তরের গোপন বিষয় তিনি জানেন।” (সূরা মু’মিন ১৯)
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন:
“আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি আল্লাহ তা’আলা থেকে লজ্জা করার জন্যে, যেমন ভাবে তুমি তোমার সম্প্রদায়ের একজন ভাল লোক থেকে লজ্জাবোধ কর।” (অত্র হাদীসটি হাসান বিন সুফইয়ান বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম আহমাদ (র:) কিতাবুয যুহুদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন ও আল্লামা নাছির উদ্দিন আলবানী (র:) ইহাকে সহীহ বলেছেন।)
অতত্রব আল্লাহ তা’আলা থেকে লজ্জা করুন। আপনি আপনার দৃষ্টিকে অধিক হালকা মনে করে লাগামহীন ভাবে ছেড়ে দিবেন না।
৫) আপনার কান, চোখ এবং দেহের চামড়া আপনার আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে:
  • এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন:
حَتَّى إِذَا مَا جَاءُوهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُودُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
“তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, চক্ষু, ও ত্বক তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষী দিবে।”(সূরা ফুসসিলাত (হা মীম সাজদাহ ২০)
  • সহীহ মুসলিমে আনাস (রা:) হতে বর্ণিত আছে , তিনি বলেন:
“একদা আমরা আল্লাহর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাছে উপবিষ্ট ছিলাম, তখন তিনি হাসলেন। অতঃপর বললেন, “তোমরা কি জানো আমি কেন হাসলাম?” আনাস (রা:) বলেন, আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাল জানেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আল্লাহর সামনে বান্দার কথোপকথন শুনে হাসলাম। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জুলুম থেকে পরিত্রাণ দিবেন না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ বলবেন, হ্যাঁ অবশ্যই! তখন সে বলবে, আমার বিরুদ্ধে আমার নিজের ভিতর থেকে কোন সাক্ষী ছাড়া অন্য কারও সাক্ষ্য গ্রহণ করব না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তখন আল্লাহ বলবেন, “আজ তোমার বিরুদ্ধে তোমার নিজের আত্মা এবং সম্মানিত লেখকগণই (ফেরেশতা) সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট।” অত:পর তার মুখে তালা লাগিয়ে দেয়া হবে এবং তার অঙ্গসমূহকে কথা বলার আদেশ দেয়া হবে, তখন তার অঙ্গসমূহ তার কৃতকর্ম সম্পর্কে বলতে শুরু করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “অতঃপর তাকে তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথে কথা বলার জন্যে ছেড়ে দেয়া হবে। এক পর্যায়ে সে অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে লক্ষ্য করে বলবে, ধ্বংস হও তোমরা, আফসোস, তোমাদের জন্যেই তো আমি এতো পরিশ্রম করতাম।” (মুসলিম)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণ হয় যে, যে চক্ষু দ্বারা আপনি হারাম জিনিস দেখে মানসিক তৃপ্তি লাভ করছেন তা কাল কিয়ামতে আপনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। অতএব আপনার চক্ষুকে হারামে পতিত হওয়া থেকে বিরত রাখুন।
৬) স্মরণ করুন ঐ সমস্ত ফেরেশতাদেরকে যারা আপনার প্রতিটি আমলকে সংরক্ষণ করে রাখছে:
  • আল্লাহ তা’আলা বলেন:
 : مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيد
“সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।” (সূরা ক্বাফ ১৮)
  • আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন:
وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ ,كِرَاماً كَاتِبِينَ , يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ
“নিশ্চয়ই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর।” (সূরা ইনফিত্বারঃ ১০-১২)
৭) স্মরণ করুন ঐ জমিন কে যার উপরে থেকে আপনি গুনার চর্চা করে চলছেন:
  • মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন:
يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا
“সেদিন (জমিন) তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে।” (সূরা যিলযাল: ৪)
  • এই আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
فَإِنَّ أَخْبَارَهَا أَنْ تَشْهَدَ عَلَى كُلِّ عَبْدٍ أَوْ أَمَةٍ بِمَا عَمِلَ عَلَى ظَهْرِهَا أَنْ تَقُولَ عَمِلَ كَذَا وَكَذَا يَوْمَ كَذَا وَكَذَا قَالَ فَهَذِهِ أَخْبَارُهَا
“জমিন তার গর্ভাস্থিত বিষয়কে বলে দেয়ার অর্থ হল, কিয়ামতের দিন মহিলা ও পুরুষ প্রত্যেক বনী আদমের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে যা তার উপরে থেকে করা হয়েছে। জমিন বলবে, উমুক দিন উমুক কাজ আমার উপর থেকে করেছে।”(তিরমিযী)
৮) বেশী বেশী নফল ইবাদত করা:
কেননা ফরয ইবাদতের পাশাপাশি বেশী বেশী নফল ইবাদত করলে আল্লাহ তাঁর বান্দার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হেফাজতে রাখেন। যেমন,
  • হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা’আলা বলেন: “যে ব্যক্তি আমার কোন অলীর সাথে শত্রু“তা পোষণ করবে, আমি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমার বান্দা যে সব ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য হাসিল করে থাকে, তার মধ্যে ঐ ইবাদতের চেয়ে আমার কাছে আর অধিক প্রিয় কোন ইবাদত নেই, যা আমি তার উপর ফরজ করেছি। বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে সর্বদা আমার এতটুকু নৈকট্য অর্জন করতে থাকে, যার কারণে আমি তাকে ভালবাসতে শুরু করি। আমি যখন তাকে ভালবাসতে থাকি তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যার মাধ্যমে সে শুনে, আমি তার চোখ হয়ে যাই যার মাধ্যমে সে দেখে, আমি তার হাত হয়ে যাই, যার মাধ্যমে স্পর্শ করে এবং আমি তার পা হয়ে যাই, যার মাধ্যমে সে চলাফেরা করে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, আমি তাকে দিয়ে দেই। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে আমি তাকে আশ্রয় প্রদান করি।” (বুখারী)
৯) বিবাহ করা: কেননা বিবাহই হল কুদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় চিকিৎসা এবং উত্তম পন্থা।
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ
“হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহ করার শক্তি রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা ইহা চক্ষু এবং লজ্জা স্থানের হেফাযতকারী। আর যে ব্যক্তি বিবাহ করার শক্তি না রাখে সে যেন রোযা রাখে। ইহা তার জন্যে ঢাল স্বরূপ।” (বুখারী ও মুসলিম)
১০) বান্দার প্রতি আল্লাহর তা’আলার প্রতিটি নেয়ামতের স্মরণ করা এবং তার উপযুক্ত শুকরিয়া করা:
সুতরাং মানুষ চোখকে ভাল ও শরীয়ত সম্মত কাজে ব্যয় করলে এবং হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকলে এতে তার এই নেয়ামতের শুকরিয়া করা হল। আর যখন উহাকে হারাম ও নিষিদ্ধ বস্তুর মধ্যে ছেড়ে দিল তখন সে এই নেয়ামতের কুফরী করল এবং অকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করল।
১১) অধিক হারে আল্লাহ তা’আলার যিকির করা:
কেননা যিকিরই হল শয়তান থেকে বেঁচে থাকার কারণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
وَآمُرُكُمْ أَنْ تَذْكُرُوا اللَّهَ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ خَرَجَ الْعَدُوُّ فِي أَثَرِهِ سِرَاعًا حَتَّى إِذَا أَتَى عَلَى حِصْنٍ حَصِينٍ فَأَحْرَزَ نَفْسَهُ مِنْهُمْ كَذَلِكَ الْعَبْدُ لَا يُحْرِزُ نَفْسَهُ مِنْ الشَّيْطَانِ إِلَّا بِذِكْرِ اللَّهِ
“আমি তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির করার আদেশ দিচ্ছি। কেননা যে আল্লাহর যিকির করে তার উদাহরণ হল ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে আক্রমণ করার জন্য শত্রু তার পিছু ধাওয়া করছে। শত্রু থেকে আত্মরক্ষার জন্যে সে একটি সুরক্ষিত প্রাচীরের মধ্যে আশ্রয় নিল এবং শত্রু“র আক্রমণ থেকে বেঁচে গেলো। এমনভাবে বান্দাকে কোন জিনিস শয়তান থেকে রক্ষা করতে পারে না একমাত্র আল্লাহর যিকির ছাড়া।” (তিরমিযী)
যখন আপনি এই ফিতনার সম্মুখীন হবেন তখন আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করুন। কেননা এই স্মরণ দ্বারা যেন আপনি শয়তানকে বিতাড়িত করতে পারেন এবং তার থেকে মুক্তি লাভ করতে পারেন। আল্লাহর যিকির মানুষের অন্তরকে কুদৃষ্টি থেকে ফিরিয়ে রাখে। বান্দা যখন আল্লাহর যিকির করে তখন এই যিকির তাঁর ভয় ও তাঁর থেকে লজ্জার কারণ হেতু বান্দার কুদৃষ্টির মাঝে এবং আল্লাহর মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।
১২) জান্নাতে হুরদের কথা স্মরণ করুন:
যেন আপনি হারাম জিনিস থেকে দূরে থেকে অতি সহজেই উহা লাভ করতে পারেন।
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى أَهْلِ الْأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا وَلَمَلَأَتْهُ رِيحًا وَلَنَصِيفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنْ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا
“জান্নাতের কোন একজন রমণী যদি দুনিয়া বাসীর দিকে একবার উকি দিত তাহলে দুনিয়ার সকল বস্তুকে আলোকিত করে ফেলত এবং সুঘ্রাণে পরিপূর্ণ হয়ে যেত, আর তার মাথার ওড়না দুনিয়া এবং উহার মধ্যবর্তী সকল বস্তু হতে অতি উত্তম। ( বুখারী )
  • আবু হারায়রা (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لِلرَّجُلِ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ زَوْجَتَانِ مِنْ حُورِ الْعِينِ عَلَى كُلِّ وَاحِدَةٍ سَبْعُونَ حُلَّةً يُرَى مُخُّ سَاقِهَا مِنْ وَرَاءِ الثِّيَابِ
“প্রত্যেক পুরুষের জন্যে জান্নাতে দু’জন করে রমণী থাকবে। প্রত্যেক রমণীর জন্যে থাকবে সত্তরটি করে পোশাকের সুট, সৌন্দর্যের কারণে পোশাকের ভিতর থেকে তাঁর হাড়ের ভিতরের মগজ প্রকাশ পাবে।” (আহমাদ)
যে হারাম থেকে তার দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখবে আল্লাহ তা’আলা তার পরিবর্তে তার চেয়ে অনেক উত্তম জিনিস ব্যবস্থা করে দিবেন।
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إِنَّكَ لَنْ تَدَعَ شَيْئًا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا بَدَّلَكَ اللَّهُ بِهِ مَا هُوَ خَيْرٌ لَكَ مِنْه
“যখন তুমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোন কিছুকে ত্যাগ করবে, তার পরিবর্তে আল্লাহ তা’আলা তোমাকে উত্তম জিনিষ দান করবেন।” (আহমাদ)
পরিশেষে আল্লাহ তা’আলার কাছে প্রার্থনা জানাই, তিনি আমাদের সকলকে এই প্রকার কুদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকার পূর্ণ তাওফীক দান করেন। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী তাঁর পরিবারবর্গ এবং সকল সাহাবাদের উপর।

লেখক: জাহিদুল ইসলাম
সম্পাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল