Thursday, January 22, 2015

জরুরী দুয়া সমূহ

জরুরী দুয়া সমূহঃ
দুয়া মানেই যে ওযু করে নামায পড়ে দুই হাত তুলে চাইতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। হ্যা, দুই হাত তুলে দুয়া করা ভালো। তবে আপনি যেকোনো সময় ওঠতে বসতে, কোথাও যেতে যেতে দুয়া করতে পারেন। এইভাবে দুয়া ও যিকিরের মাধ্যমে আমাদের অবসর সময়গুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করা উচিত। আল্লাহ আমাদের তোওফিক দান করুন, আমিন।
নিচের এই দুয়াগুলো হাত তুলে বা হাত না তুলে, যেকোন মুনাজাতে, ফরয, সুন্নত বা নফল যেকোন নামাযের যেকোন সিজদাতে, নামাযের শেষ অংশে অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু ও দুরুদ পড়ার পরে সালাম ফেরানোর আগে দুয়া মাসুরা হিসেবে, বিতিরের কুনুতে বা যেকোনো সময়ই পড়া যাবে। দুয়াগুলো ফরয নামাযের ভেতরে আরবীতে পড়তে হবে, আরবীতে না পারলে নফল-সুন্নত নামাযের সিজদাতে, সালাম ফেরানোর পূর্বে বা নামাযের বাইরে আরবী বা বাংলা, যেকোন ভাষাতেই দুয়াগুলো পড়া যাবে।
১. সবচাইতে কম কথায় সবচাইতে বেশি কল্যান প্রার্থনা করার দুয়াঃ
এই দুয়াটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব বেশি বেশি করতেন।
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অধিকাংশ দো‘আ হতঃ
رَبَّنَآ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْاٰخِرَةِ حَسَـنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণঃ রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হা’সানাতাওঁ-ওয়াফিল আ-খিরাতি হা’সানাতাওঁ ওয়া-ক্বিনা আ’যাবান্নার।
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ দান করো এবং পরকালের জীবনেও কল্যাণ দান করো। আর তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে বাঁচাও। সুরা আল-বাক্বারাহঃ ২০১।
কেউ যদি অন্য কোন দুয়া না জানেন আর যেকোন কল্যানের জন্য দুয়া করতে চান, অন্তরে সেই জিনিস পাওয়ার জন্য নিয়ত রেখে এই দুয়া পড়লেও হবে।
২. পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য দুয়াঃ
আমাদের আদিপিতা আদম (আঃ) ও মা হা’ওয়্যা (আঃ) আল্লাহর নিষেধ অমান্য করলে ক্ষমা প্রার্থনা ও তোওবা করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লা তাদের দুইজনকে এই দুয়াটি শিখিয়ে দিয়েছিলেন। এই দুয়ার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআ’লা তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। আমাদের উচিত তাদের মতো আমাদের পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য নিয়মিত এই দুয়া বেশি করা।
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
উচ্চারণঃ রাব্বানা যোয়ালামনা আন-ফুসানা ওয়া-ইল্লাম তাগ-ফিরলানা, ওয়াতার্ হা’মনা লানা কুনান্না মিনাল খাসিরিন।
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছি, অতএব আপনি যদি আমদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন তাহলে নিশ্চয়ই আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হব। সুরা আল-আ’রাফঃ ২৩।
৩. পিতা-মাতার জন্য দুয়াঃ
জীবিত বা মৃত পিতা মাতা দুইজনের জন্য এই দুয়া বেশি করতে হবেঃ
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
উচ্চারণঃ রাব্বির হা’ম-হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগিরা।
অর্থঃ হে আমাদের পালনর্তা! আপনি আমার পিতা-মাতার প্রতি তেমনি দয়া করুন যেইরকম দয়া তারা আমাকে শিশু অবস্থায় করেছিল।
মৃত মানুষ জীবিত মানুষের দুয়া দ্বারা উপকৃত হয়, তাই পিতা-মাতার জন্য এই দুয়া করে তাদের উপকার করা সম্ভব। সেইজন্য দুয়া কবুলের সময়গুলোতে যেমন সিজদার সময় এই দুয়া বেশি পড়া উচিত।
৪. ছোট্ট কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দুয়াঃ
আল্লাহ যখন কারো ভালো করতে চান তখন তাকে অনেক টাকা পয়সা, ভালো স্বামী বা স্ত্রী, দামী গাড়ি দেননা। যদিও আমরা এইগুলোকেই কল্যানের বিষয় বলে মনে করি। পার্থিব সুখ স্বাচ্ছন্দ কখনো আল্লার নেয়ামত হতে পারে, কখনোবা সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন পরীক্ষাও হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ যখন কারো কল্যান করতে চান, তখন তাকে “ফিকহ” বা দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন। আর সেই জ্ঞান চাওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর শেখানো সুন্দর ছোট্ট একটা দুয়া আছে, আপনারা মুখস্থ করে নিতে পারেন।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْماً نافِعاً، وَرِزْقاً طَيِّباً، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলুকা ই’লমান নাফিআ’ন, ওয়া রিযক্বান ত্বাইয়্যিবান, ওয়া আ’মালাম মুতাক্বাববালান।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র জীবিকা ও গ্রহণযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি। ইবনে মাজাহ, হিসনুল মুসলিম পৃষ্ঠা ১১৩।
এই দুয়াটা আমার প্রিয় কারণ, এর সাথে আরো দুইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চাওয়া হয়েছে – রিযকান ত্বাইয়্যিবান বা পবিত্র জীবিকা – এর দ্বারা দুনিয়াবি চাহিদার পূরণের জন্যও দুয়া করা হলো আর, আ’মালান মুতাক্বাব্বালান বা – এমন আমল যা আল্লাহর কাছে কবুল হয়, পরকালের জন্য যা প্রয়োজন তাও প্রার্থনা করা হলো। এতো গুরুত্বপূর্ণ তিনটা বিষয় একসাথে ছোট্ট একটা দুয়ার মধ্যে থাকায় আমাদের সবার শিখে নেওয়া উচিত। এই দুয়া প্রত্যেকদিন ফযরের ফরয নামাযের সালাম ফেরানোর পর একবার পড়া সুন্নত। এছাড়া সিজদাতে, সালাম ফিরানোর আগেসহ যেকোনো সময় করা যাবে। আরবীতে না পারলে বাংলাতেও করা যাবে, যতদিন না মুখস্থ হচ্ছে। দুয়াটা পাওয়া যাবে হিসনুল মুসলিম বইয়ের ১১৩ নাম্বার পৃষ্ঠায়।
৫. দুই সিজদার মাঝখানে বসাঃ
এখানে নিজের পছন্দমতো যেকোনো দুয়া করা যায়না, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই দুয়াগুলো করেছেন শুধুমাত্র সেই দুয়াগুলোই করা যাবে। আর এইখানে দুয়া আরবীতেই করতে হবে। দুই সিজদার মাঝখানে এই দুয়াগুলো করার সময় তাশাহুদের মতো আংগুন দিয়ে ইশারা করা সুন্নত। যেই দুয়া করতে হবেঃ ছোট্ট এই দুয়াটা কি মুখস্থ করা যায়না?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয, সুন্নত, নফল যে কোনো সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায় এই দুআটি করতেনঃ
رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي
উচ্চারণঃ রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি। অর্থঃ হে আমার রব আমাকে ক্ষমা করা, হে আমার রব আমাকে ক্ষমা কর। আবু দাউদ ১/৩১, ইবনে মাজাহ, দুয়াটা সহীহ।
এই ছোট্ট দুয়াটা পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ মিস করা ঠিকনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে ৭০ থেকে ১০০ বার তোওবা করতেন। আপনি যদি সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে এই দুয়াটা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন তাহলে দিনে যত রাকাত করে সালাত পড়বেন, তত বারই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া হবে। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার একটা উপায় হচ্ছে বেশি বেশি করে নিয়মিত তোওবা ও ইস্তিগফার করা (ক্ষমা চাওয়ার দুয়া করা)। এছাড়া দুই সিজদার মাঝখানে আরেকটা ছোট্ট সুন্দর দুয়াঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي، وَارْفَعْنِي
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাগফিরলী, ওয়ারহা’মনী, ওয়াহদিনী, ওয়াজবুরনী, ওয়াআ’ফিনি, ওয়ারযুক্বনী, ওয়ারফা‘নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন”।
হাদীসটি ইমাম নাসাঈ ব্যতীত সুনান গ্রন্থগারগণ সবাই সংকলন করেছেন। আবূ দাউদঃ ৮৫০, তিরমিযীঃ ২৮৪, ২৮৫, ইবন মাজাহঃ ৮৯৮। শায়খ আলবানির মতে হাদীস সহীহ।
বিঃদ্রঃ এই দুয়াটা কম-বেশি বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা আছে, সবগুলো সহীহ – তবে এখানে যেটা দেওয়া আছে এটা সবচাইতে বড় যেখানে সবগুলো দুয়া একসাথে আছে। এটা করলে সবগুলো দুয়াই করা হলো।
৬. নেককার স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান পাওয়ার জন্য বা স্বামী/স্ত্রী-সন্তান ধার্মিক হওয়ার জন্য দুয়াঃ
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণঃ রব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা ক্বুররাতা আ’ইয়ুন, ওয়াজআ’লনা মুত্তাক্বীনা ইমামা।
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর। সুরা আল-ফুরক্বানঃ ৭৪।
দিনে রাতে যে কোনো সময় আমল করার জন্য এই বইয়ের সবগুলো দুয়াই সহীহ, আর দাম মাত্র ৫০ টাকা। ছোট্ট এই বইটা পকেটে রেখে দেওয়া যায়, রাস্তায়, জার্নিতে, বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষায় বা যে কোনো অবসব সময়ে বের করে দুয়াগুলো শিখে বা পড়ে সময়টা নষ্ট না করে কাজে লাগানোর জন্য।
বিঃদ্রঃ - যারা অলসতা বশত বা ইমানের দুর্বলতার কারণে আরবী মুখস্থ করতে চান না বা পারেন না, তারা অন্তত বাংলাটা মুখস্থ করে রাখতে পারেন এবং মুনাজাতের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো গুরুত্বপূর্ণ এই জিনিসগুলো আল্লাহর কাছে চাইতে পারেন।
৭. আল্লাহর যিকর, শুকিরিয়া ও সুন্দরভাবে তাঁর ইবাদত করার জন্য সাহায্য চাওয়ার দুয়াঃ
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبادَتِكَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আ ই’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হু’সনি ইবাদাতিকা।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার স্মরণ, তোমার কৃতজ্ঞতা এবং তোমার সুন্দর ইবাদত করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য কর”।
এই দুয়া ইচ্ছা করলে নামাযের ভেতরে সিজদাতে বা সালাম ফেরানোর আগে দুয়া মাসুরার সময়ও করা যায়। এই দুয়াটা এতো গুরুত্বপূর্ণ যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এক সাহাবীকে এই দুয়া পড়ার জন্য বিশেষভাবে ওয়াসীয়ত করে যান। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) এর হাত ধরে বলেছিলেনঃ ‘‘হে মুয়াজ! আল্লাহর কসম আমি তোমাকে ভালোবাসি। অতঃপর তিনি বললেন, হে মুয়াজ! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে তুমি প্রত্যেক সালাতের পর এই দুয়া করা ত্যাগ করবেনা, “আল্লাহুম্মা আ ই’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হু’সনি ইবাদাতিকা।” আবু দাউদ ১/২১৩, নাসায়ী, ইবেন হিব্বান, হাদীস সহীহ।
৮. ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেকোনো শিরক থেকে বাঁচার দুয়াঃ
কেউ ৪০ বছর আল্লাহর ইবাদত করলো, কতযে নফল সুন্নত নামায পড়লো, রোযা রাখলো - কিন্তু মরণের আগে শিরক করে তোওবা না করেই মারা গেলো... একটা মাত্র শিরক তার সমস্ত আমল নষ্ট করে দেবে (নাউযুবিল্লাহ)!
কেয়ামতের দিন তার আমলগুলোর কোনো ওযন আল্লাহ তাকে দেবেন না, এইগুলোকে ধূলো বালিতে রূপান্তরিত করে দেবেন। আর জেনে হোক বা না জেনেই হোক যেকেউ, যেকোনো সময় শিরকে লিপ্ত হতে পারে, যে যত বড় নেককারই হোক না কেনো (মা যা' আল্লাহ)।
এইজন্য শিরক করা অথবা অনিচ্ছায় শিরকে লিপ্ত হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শেখানো একটা দুয়া আছে, কেউ যদি প্রতিদিন সকাল বিকাল একবার করে পড়েন, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে শিরক থেকে হেফাজত করবেন।
আপনি কি জানেন, সেই দুয়াটা কি? দুয়াটা হচ্ছেঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লাম, ওয়া আস-তাগফিরুকা লিমা লা আ’লাম।
অনুবাদঃ হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমার অজানা অবস্থায় কোনো শিরক হয়ে গেলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আহমাদ ৪/৪০৩, হাদীসটি সহীহ, সহীহ আল-জামে ৩/২৩৩। হিসনুল মুসলিমঃ পৃষ্ঠা ২৪৬।
৯. বিপদ বা দুঃশ্চিন্তার জন্য এই দুয়াটা সবাই মুখস্থ করে নিনঃ
তিমি মাছের পেটে থাকা অবস্থায় ইউনুস (আঃ) এই দোয়া করেছিলেন এবং কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছিলেন।
لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظّالِمِينَ
উচ্চারণঃ লা ইলা-হা ইল্লা-আনতা, সুবহা’-নাকা ইন্নি কুনতু-মিনায-যোয়ালিমিন।
অর্থঃ "(হে আল্লাহ) তুমি ছাড়া আর কোনো মা’বুদ নাই, তুমি পবিত্র ও মহান! নিশ্চয় আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।"
কুরানুল কারীমে এই দুয়া বর্ণিত হয়েছে সুরা আল-আম্বিয়া: আয়াত নাম্বার ৮৭ তে।
এই দুয়ার উপকারীতাঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কোনো মুসলিম যদি এই দুয়া পড়ে, তার দুয়া কবুল করা হবে। অন্য হাদীস অনুযায়ী, এই দুয়া পড়লে আল্লাহ তার দুঃশ্চিন্তা দূর করে দিবেন।” সুনানে আত-তিরমিযী।
দুয়া কিভাবে পড়তে হবেঃ বিপদ আপদ বা দুঃশ্চিন্তার সময় এই দুয়া বেশি বেশি করে পড়তে হয়। যতবার ইচ্ছা ও যতবার সম্ভব হয় ততবার পড়বেন। এক লক্ষ পঁচিশ হাজার পড়ে যে “খতম ইউনুস” পড়ানো হয় হুজুর বা মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে টাকা দিয়ে ভাড়া করে, বা দুয়া কেনাবেচা করা হয় – এইগুলো বেদাত – এই রকম খতম করানোর কোনো দলীল নেই শরীয়তে। আপনার যতবার সম্ভব হয় ততবার পড়বেন – এত এত বার পড়তে হবে, এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আপনি নিজের জন্য নিজে দুয়া করবেন - আল্লাহর কাছে সেটাই বেশি পছন্দনীয়। সর্বোত্তম হচ্ছে – ফরয/নফল/সুন্নত যেকোনো নামাযের সিজদাতে এই দুয়া পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর অতুলনীয় রহমতের ছায়ার মধ্যে আশ্রয় দিন, আমীন।
১০. হেদায়েতের উপর থাকা, অন্তর যেন দ্বীনের উপরে থাকে তার জন্য দুয়াঃ
আরবীতে হৃদয়কে বলা হয় ‘ক্বালব’, যার একটা অর্থ হচ্ছে - যেই জিনিস খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায়। অর্থাৎ, মানুষের হৃদয় খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায়, একারণে মানুষ আজকে যাকে ভালোবাসে, কাল তাকে ঘৃণা করে। কেয়ামতের আগে এমন হবে মানুষ সকালে ঈমানদার থাকবে, সন্ধ্যা সময় কাফের হয়ে যাবে। আবার মানুষ সন্ধ্যা সময় ঈমানদার থাকবে, সকালে কাফের হয়ে যাবে। এইজন্য হৃদয় যাতে পরিবর্তন না হয়ে যায়, পাপাচার, কুফুরী, আল্লাহর নাফরমানির দিকে ঝুকে না পড়ে সেই জন্য আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি করে এই দুয়া করতেনঃ
উচ্চারণঃ ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুব! সাব্বিত ক্বালবী আ’লা দ্বীনিক।
অর্থঃ হে হৃদয় সমূহের পরিবর্তন করার মালিক! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর অবিচলভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখো। সুনানে তিরমিযী।
১১. জান্নাত প্রার্থনা করা ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়ার দুয়াঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্নার।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করো। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, জাহান্নাম আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও”।
তিরমিযিঃ ২৫৭২, ইবনে মাজাহ ৪৩৪০, শায়খ আলবানি এই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামি ৬২৭৫।
***উল্লেখ্য – সকাল সন্ধ্যায় ৭ বার “আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার” পড়ার হাদীসটা জয়ীফ বা দুর্বল, শায়খ আলবানী সিলসিলা জয়ীফাহঃ ১৬২৪।
সুতরাং সেটা না পড়ে এই দুয়া পড়বেন, কারণ এটাতে জান্নাত চাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া দুইটা দোয়া আছে আর এটা সহীহ। ঐটা থেকে এইদুয়াটা ভালো ও সহীহ।
১২. কেয়ামতের দিন হিসাব সহজ করার জন্য দুয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেকের হিসাব নেওয়া হবে আর আল্লাহ যার হিসাব নেবেন তাকে শাস্তি দেবেন। এই কথা শুনে সাহাবীরা ভয় পেলো, কারণ কে এমন আছে যে নিষ্পাপ? সুতরাং সকলেই শাস্তি পাবে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মুমিনদের জন্য হিসাব সহজ করা হবে। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাঁর ঈমানদার বান্দাদেরকে রহমতের চাদরে ঢেকে নেবেন, অন্যদের থেকে আলাদা করে দেবেন। এরপরে গোপনে তাকে তার পাপকাজগুলো দেখানো হবে। বান্দা তার পাপকাজগুলো দেখে ভয় পেয়ে যাবে, আর চিন্তা করতে থাকবে তাহলেতো আমার বাঁচার কোনো পথ নাই! তখন আল্লাহ তাকে বলবেন তুমি পাপ করেছো কিন্তু অমুক সময় তোওবা করেছো আর আমি তোমার তোওবা কবুল করেছি। আর শুধু কবুলই করিনাই – তোওবা করেছো এইজন্য পাপ কাজগুলোকে এখন নেকীতে পরিবর্তন করে দিলাম। এইকথা শুনে বান্দা খুব খুশি হয়ে বলবে, হে আল্লাহ আমারতো আরো অনেক পাপ আছে – সেইগুলোতো দেখতে পাচ্ছিনা (পাপের পরিবর্তে নেকী পাওয়ার আশায় সে এই কথা বলবে)।
এর পরে বান্দাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে। এই হচ্ছে হিসাব সহজ করার পদ্ধতি। এরকম যেন হিসাব গ্রহণ সহজ করা হয়, এই জন্য এই দুয়া করতে হয়ঃ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্ম হা’সিবনি হি’সাবাই-য়্যাসিরা। অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি আমার হিসাব সহজ করো।
ইমাম হাকিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, শায়খ আলবানীর মতে দুয়াটি হাসান সহীহ।
১৩. গুনাহ মাফ করার ও নেককার ঈমানদার হিসেবে মৃত্যুর জন্য দুয়াঃ
رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
উচ্চারণঃ রাব্বানা ফাগফির লানা যুনুবানা ওয়া-কাফফির আ’ন্না সাইয়্যিআ-তিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মাআ’ল আবরা-র।
অর্থঃ হে আমাদের পালনর্তা! আপনি আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন, আমাদের মন্দ কাজগুলো দূর করে দিন আর আমাদেরকে নেককার হিসেবে মৃত্যু দান করুন। সুরা আলে ইমরানঃ ১৯৩।
১৪. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্দর একটি দুয়াঃ
মুখস্ত করে নিতে পারেন ও মুনাজাতে বেশি বেশি করে আর বিশেষ করে সিজদাতে বা সালাম ফেরানোর পূর্বে এই দুয়া করতে পারেন।
اَللهم إِنِّي أَسْأَلُكَ الهُدَى، وَالتُّقَى، وَالعَفَافَ، وَالغِنَى
আল্লা-হুম্মা ইন্নি আস-আলুকাল হুদা ওয়াত-তুকা ওয়াল আ'ফাফা ওয়াল গি’না।
অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, সুস্থতা ও সম্পদ প্রার্থনা করছি।
মুসলিম ২৭২১, তিরমিযী ৩৪৮৯, ইবনু মাজাহ ৩৮৩২, আহমাদ ৩৬৮৪।

Tuesday, January 13, 2015

জুমুয়া’র সালাহ কিভাবে পড়বেন?

প্রশ্নঃ জুমুয়ার সালাহ কিভাবে পড়বেন?

উত্তরঃ আপনি মসজিদে প্রবেশ করে, প্রথমেই দুই রাকাত সালাহ আদায় করবেন। এটা হলো তাহিয়্যাতুল মসজিদের সালাহ। এমনকি খতিব সাহেব যদি খুতবা দিতে থাকেন (আরবীতে ওয়াজিব দুইটা খুতবা / বাংলায় বেদাতী খুতবা, ওয়াজিব দুইটা খুতবার আগে, যেকোনো সময়েই হোক) তবুও আপনি এই দুই রাকাত সালাহ পড়তে পারবেন, কারণ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর আদেশ সেই রকম।

এর পরে আপনার ইচ্ছা হলে আর খুতবা শুরু না হলে, দুই রাকাত দুই রাকাত রাকাত করে নফল নামায পড়তে পারেন অথবা অন্য যিকির করবেন, কোনো ধরা বাঁধা নিয়ম নেই। খতিব খুতবা দেওয়া শুরু করলে চুপ করে মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। ফরয ২ রাকাতের পরে যদি মসজিদে নামায পড়েন তাহলে ২+২=৪ রাকাত সুন্নত পড়বেন। আর মসজিদে না পড়লে বাসায় এসে ২ রাকাত নামায পড়া সুন্নত। 

নারীদের যদি মসজিদে যাওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে মসজিদে পুরুষদের মতোই জমুয়াহ পড়বেন। আর বাসায় পড়লে যোহরের সালাত পড়বেন। ওয়াক্ত হলেই নামায পড়বেন, পুরুষের নামায শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবেন না।

জুমুয়ার নামাযের কিছু ভুলঃ

এই পোস্ট যারা কুরান ও সহীহ হাদীস জানতে আগ্রহী তাদের জন্য, যারা প্রচলিত ভুল আর জাল জয়ীফ আঁকড়ে ধরে থাকতে চান তাদের জন্য নয়। দয়া করে গালি দিয়ে বা দলীল বিহীন যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না।

১ নাম্বার ভুলঃ মসজিদে গিয়ে ২ রাকাত নামায না পড়ে বসে পড়া, পরে ইমাম সাহবে যখন সময় দেয় তখন ৪ রাকাত পড়া।
এই ধরণের সুন্নত বিরোধী আমলের কোনো ভিত্তি নেই, সুন্নত হচ্ছে জুমুয়ার দিনে কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে সে তাহিয়্যাতুল মসজিদের ২ রাকাত সুন্নত নামায পড়বে (বুখারী)।
এমনকি ইমাম সাহবে খুতবা দিতে থাকলেও সে এই নামায পড়বে এটাই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ফয়সালা।
এর পরে যদি খুতবা দেওয়ার আগে সময় থাকে তাহলে সে যিকির করবে, দুয়া, দুরুদ পড়বে। আর তার ইচ্ছা হলে ২ রাকাত ২ রাকাত করে যতক্ষণ না খুতবা শুরু হয় নফল নামায পড়তে পারবে। কত রাকাত পড়বে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই, আমাদের দেশে চার রাকাত যে কাবলাল জুমুয়ার সিস্টেম এই হাদীস অত্যন্ত জয়ীফ, এর পক্ষে কোনো সহীহ হাদীস নেই।

২ নাম্বার ভুলঃ ইমামের বাংলা ভাষায় ৩ নাম্বার খুতবা দেওয়া এটা নব আবিষ্কৃত একটা বেদাত। এটাকে তারা খুতবা বলুক, ওয়াজ যাই বলুক এটা খুতবা হিসেবেই গণ্য হবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খুতবা দিতেন ২টা। পাকিস্থানের বড় হানাফী মুফতি ও মারেফুল কুরানের লেখক মুফিত শফি সাহেব এই খুতবা দেওয়াকে বেদাত বলেছেন কারণ কুরান সুন্নতে এমন কোনো কিছু পাওয়া যায়না।
আর এই বাংলা ভাষায় বেদাতী ৩ নাম্বার খুতবার সময় তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায না পড়ার জন্য লাইট জ্বালিয়ে রাখা, পড়তে নিষেধ করা এই সবগুলো হলো সুন্নতের সাথে বেয়াদবী, একটা বেদাতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুন্নতকে নিষিদ্ধ করা (নাউযুবিল্লাহ)।

আর অনেকে মনে করে খুতবা আরবীতে দিতে হবে। এটা ঠিক নয়, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর জাতি যেই ভাষাতেই কথা বলতো সেই ভাষাতেই খুতবা দিতেন সুতরাং আমাদের দেশে খতিব সাহেবদের উচিত হবে বাংলায় খুতবা দেওয়া।
৩ নাম্বার ভুলঃ খুতবার সময় দান বাক্স চালু করে খুতবা শুনতে বিঘ্ন ঘটানো। মসজিদের টাকা তোলার দরকার আছে কিন্তু খুতবা শোনা তার থেকেও জরুরী। এটা খুতবা শোনার আদবের পরিপন্থী একটা বিষয়।

৪ নাম্বার ভুলঃ নামাযের পরে সম্মিলিত মুনাযাত করা। জুমুয়ার দিনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খুতবার মধ্যে দুয়া করতেন আর সবাই মনে মনে আমীন বলে সেই দুয়া শরীক হতেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কোনোদিন কোনো নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করেছেন এর কোনো প্রমান নেই।

প্রত্যেক ফরয নামাযের পরে সম্মিলিত দুয়া করা বেদাত

৫ নাম্বার ভুলঃ মানুষ বেশি হওয়ার কারণে কোনো এক ফাঁকে ঢুকে গিয়ে অন্যকে কষ্ট দিয়ে বসা। হাদীসে এটা নিষেধ করতে নিষেধ করা হয়েছে- যেখানে জায়গা পাবেন সেখানে বসবেন। চাপাচাপি করে কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবেনা। দরকার হলে নিজে কষ্ট করে ছাদে, রাস্তায় নামায পড়বেন তবু অন্যকে কষ্ট দিবেন না।

৬ নাম্বার ভুলঃ খুতবার সময় কথা বলা (মুখে বা ইশারায়) এটা খুবই মারাত্মক একটা বিষয় এমনকি কারো জুমুয়ার নামায বাতিল হয়ে যেতে পারে এই নিকৃষ্ট কাজের জন্য। কেউ যদি আপনার সাথে কথা বলতে চায়, আপনি যদি তাকে বলেন, “চুপ করোতাহলেও আপনার গুনাহ হবে (সহীহ হাদীসে সেটাই বলা হয়েছে). এবার তাহলে চিন্তা করুন, কেমন আছো, কি খবর? এই ধরণের খাজুইর‍্যা আলাপ করলে কতটুকু গুনাহ হবে?

আমরা লিখে যাচ্ছি, আপনারা চেষ্টা করবেন এইগুলো ঠিকমতো করার জন্য। সাধারণ মানুষ যদি কুরান সুন্নাহর দিকে ফিরে যায় ইমাম সাহেবেরা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। মুসল্লিরা যেরকম, আল্লাহ তাদেরকে সেইরকম ইমাম বা নেতা দান করেন। মুসল্লিরা ঠিক হলে ইমাম সাহবেরাও একদিন ঠিক হয়ে যাবেন ইন শাআল্লাহ।

প্রশ্নঃ জুমুয়ার দিনে খুতবা শোনা ওয়াজিব আর তাহিয়্যতাতুল মসজিদের নামায পড়া সুন্নত। তাহলে ওয়াজিব ছেড়ে কি করে নফল/সুন্নত পড়বো?

উত্তরঃ দ্বীন হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর নবী আমাদেরকে যেইভাবে শিক্ষা দিয়েছেন সেটা।

এই দ্বীন যার মাধ্যমে আমাদের কাছে আল্লাহ পাঠিয়েছেন তিনি আমাদেরকে হুকুম করেছেন কেউ যদি জুমুয়ার দিনে মসজিদে এসে দেখে যে খুতবা চলছে তাহলে সে যেনো সংক্ষেপে ২ রাকাত নামায পড়ে নেয়।
অন্য হাদীসে এসেছে, এই লোক এই ২ রাকাত না পড়ে বসে গেছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে উঠিয়ে ২ রাকাত নামায পড়িয়েছেন।

জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) এর খুবা দানকালে সেখানে এক ব্যক্তি আগমন করেন। তিনি তাকে বলেন , হে অমুক! তুমি কি (তাহিয়াতুল মাসজিদ) সালাত পড়েছ? ঐ ব্যক্তি বলেন, না । নবী (সাঃ) বলেন, তুমি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর । অন্য হাদীসে বলা হয়েছে তুমি সংক্ষিপ্ত ভাবে দুই রাকাআত (তাহিয়াতুল মাসজিদ) সালাত আদায় কর ।

[বুখারী হা/৮৮৩; মুসলিম হা/১৮৯৫-১৯০০ ; তিরমিযী; ইবনে মাজাহ; নাসাঈ হা/১৪০৩; আবু দাউদ হা/১১১৫-১১১৭]০

এই হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ফয়সালা।
যেই ব্যক্তি মানুষের মধ্যে সবার থেকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কথাকে বেশি মূল্যায়ন করেনা, সেই ব্যক্তি নবীর নাফরমান।

আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ

আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ 
 
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য আমরা তাঁরই প্রশংসা করছি, তাঁর কাছেই সাহায্য চাচ্ছি আর তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি আমাদের মন্দ কৃতকর্ম, এবং আত্মার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আল্লাহর দরবারে আশ্রয় নিচ্ছি, আল্লাহ তা'আলা যাকে হিদায়াত করেন তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হেদায়াত করার কেউ নেই, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবুদ নেই, তার কোন শরীক নেই, আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা রাসূল

স্রষ্টা সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম মানার ব্যাপারটা অত্যন্ত বিপজ্জনক বিষয় পরিতাপের বিষয় যে, অনেক মুসলমানই সম্পর্কে পরিষ্কার
কোন ধারণা রাখেনা ফলে আমরা আল্লাহর সাহায্য সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হতে চলেছি, যে সাহায্য করার কথা তিনি কুরআনে তাঁর কাছে আশ্রয় কামনা এবং তাঁর শরীয়তের অনুসরণ করার শর্তে ঘোষণা করেছেন

আল্লাহ বলেন :
আর মু'মিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব
সূরা আর-রূম: ৪৭

যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তবে তিনিও তোমাদের সাহায্য করবেন, এবং তোমাদের পদযুগলে স্থিতি দিবেন
সূরা মুহাম্মাদ:

আল্লাহর জন্যই যাবতীয় সম্মান, আর তাঁর রাসূলের জন্য, এবং মু'মিনদের জন্য
সূরা আল-মুনাফিকূন:

তোমরা দুর্বল হয়োনা, এবং তোমরা চিন্তা করোনা, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা ঈমানদার হও
সূরা আলে-ইমরান: ১৩৯

***সৃষ্টি স্রষ্টার মাঝে মাধ্যম বলতে কি বুঝায়, ব্যাপারে মানুষ তিনটি দলে বিভক্তঃ

*একঃ একদল হচ্ছে তারা যারা শরীয়ত প্রণেতা হিসাবে প্রেরিত একমাত্র মাধ্যম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেও মানতে নারাজ, বরং তারা দাবী করছে, - আর কত জঘন্যই না তাদের দাবী - যে, শরীয়ত শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের জন্য, উপরন্ত তারা শরীয়ত কে "ইলমে জাহীর" বা প্রকাশ্য বিদ্যা হিসাবে নামকরণ করেছে, তারা তাদের ইবাদতের ক্ষেত্রে কতেক বাজে চিন্তা-ধারণা কুসংস্কারকে গ্রহণ করে "ইলমে বাতেন" বা গোপন বিদ্যা নামে চালু করেছে, আর এর দ্বারা যা অর্জিত হয় তার নাম দিয়েছে (কাশফ) মূলত তাদের এই কাশফ ইবলীশি কুমন্ত্রণা আর শয়তানী মাধ্যম ছাড়া কিছুই নয়, কারণ এটা ইসলামের সাধারণ মুলনীতির পরিপন্থী, ব্যাপারে তাদের দলগত শ্লোগান হলোঃ কথা (আমার মন আমার রব থেকে সরাসরি বর্ণনা করেছে)

এতে করে তারা শরীয়তের আলেমদের সাথে ঠাট্টা করছে, এবং বলে দোষ দিচ্ছে যে, তোমরা তোমাদের বিদ্যা অর্জন করছ ধারাবাহিকভাবে মৃতদের থেকে আর তারা তাদের বিদ্যা সরাসরি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী রব এর কাছ থেকে অর্জন করছে সমস্ত কথা দ্বারা তারা অনেক সাধারন মানুষকে আকৃষ্ট করে তাদের পথভ্রষ্ট করছে আর শরীয়ত নিষিদ্ধ অনেক কাজ তারা এভাবে জায়েয করেছে যার বিবরণ তাদের কুসংস্কারপূর্ণ বই গুলিতে বিশদভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ফলে ব্যবস্থার অবসান কল্পে আলেমগণ তাদেরকে কাফের এবং ধর্ম বিচু্যতির কারণে তাদের হত্যা করার নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন কারণ তারা জানতনা বা জেনেও না জানার ভান করত যে, ইসলামের প্রথম মূলনীতি হলোঃ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবতীর্ণ পদ্ধতির বাইরে কেউ আল্লাহর ইবাদাত করলে সে কাফের হিসাবে গণ্য হবে; কেননা আল্লাহ বলেন:

"সুতরাং তারা যা বলছে তা নয় বরং আপনার রবের শপথ, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে তাদের মধ্যকার ঝগড়ার মাঝে বিচারক
মানবেনা অতঃপর তাদের অন্তরে আপনার ফয়সালার ব্যাপারে কোন প্রকার দ্বিধা দ্বন্দ্বের অস্তিত্ব থাকবেনা, এবং পরিপুর্ণভাবে তা মেনে নিবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ঈমানদার হতে পারবেনা"
সূরা আন্-নিসা: ৬৫

আর এভাবেই শরীয়তের ইলমের বিরোধীতা তার আলোকে নির্বাপিত করার কাজ শয়তান তাদের মনে সৌন্দর্য মন্ডিত করে দেখায় ফলে তারা নিশ্চিদ্র অন্ধকারে ঘুরতে থাকে এবং তাদের খেয়াল খুশি মোতাবেক আল্লাহর ইবাদত করতে থাকে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা তাদের যে চিত্র অংকন করেছেন তা তাদের ক্ষেত্রে সঠিক বলে প্রতিয়মান হয় আল্লাহ তা'আলা বলেন :

"বলুন: আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্তদের সংবাদ দেব? (তারা হলো সব লোক) যাদের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত প্রচেষ্টা পন্ড হয়ে গেছে, অথচ তারা মনে করত কত সুন্দর কাজই না তারা করছে, তারাই সে সব লোক যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ তার সাথে সাক্ষাৎকে অস্বীকার করেছে, ফলে তাদের সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে, সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য কোন ওজন স্থাপন করবোনা"
সূরা আল-কাহ্ফ: ১০৩-১০৫

গ্রুপ শতধা বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে লেগেছে, কারণ তারা সহজ সরল পথ থেকে দূরে সরে গেছে, যে পথ ছিল আল্লাহর নেয়ামতপ্রাপ্তদের পথ, অভিশপ্ত বা পথহারাদের পথ নয় তাদের সমস্ত গ্রুপই জাহান্নামে যাবে, কারণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
"আমার উম্মত তিয়াত্তর ফেরকা বা গ্রুপে বিভক্ত হবে, বাহাত্তরটি জাহান্নামে আর একটি জান্নাতে যাবে - যারা আমি এবং আমার সাহাবাগণ যে পথে আছি, তার উপর থাকবে".
হাদিসটি আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, তিরমিযি, হাদীস সহীহ

**দুইঃ যারা মাধ্যম সাব্যস্ত করতে গিয়ে সীমালংঘন করেছে, আর মাধ্যমের ভুল ব্যাখ্যা করে এর উপর এমন কিছু জিনিস চাপিয়েছে, যা চাপানো কক্ষনো জায়েয নয় তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং অন্যান্য নবী নেক্কার ব্যক্তিবর্গকে এমনভাবে মাধ্যম মানতে শুরু করেছে যে তাদের বিশ্বাস আল্লাহ তা'আলা কারো কোন আমল এদের মাধ্যম হয়ে না আসলে কবুল করবেননা; কারণ এরাই হচ্ছে তার কাছে যাওয়ার অসীলা (নাউজুবিল্লাহ). এতে করে তারা আল্লাহ তা'আলাকে এমন সব অত্যাচারী বাদশাহদের বিশেষণে বিশেষিত করেছে যারা তাদের প্রাসাদে প্রচুর দারোয়ান নিযুক্ত করে রেখেছে যাতে করে কোন শক্তিশালী মাধ্যম ছাড়া তাদের কাছে পৌঁছা কক্ষনো সম্ভব হয়ে উঠেনা অথচ আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন:
"যখন আপনাকে আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করে তখন (বলুন) আমি নিকটে, আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার ডাকে সাড়া দেই, সুতরাং তারা যেন আমার হুকুম মেনে নেয় এবং আমার উপরই ঈমান আনে যাতে করে তারা ৎপথ লাভ করে" আল্লাহ তা'আলার বাণীর সাথে পূর্ব বর্ণিত লোকদের বিশ্বাসের সংগতি কতটুকু?

আয়াত ইঙ্গিত করছে যে, আল্লাহর কাছে পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে তার উপর সঠিকভাবে ঈমান আনা এবং তার প্রর্দশিত পথে ইবাদাত করা দৃশ্যনীয় যে, আয়াতে ইবাদতের কথা ঈমানের পূর্বে উল্লেখ করে নেক আমল বা ৎকাজের গুরুত্ব সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে; কেননা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন তার জান্নাত হাসিলের জন্য এটা প্রধান শর্ত আল্লাহ তা'আলা কুরআনে অসীলা শব্দের উল্লেখ করেছেন এবং তা দ্বারা পূর্ণ আনুগত্য করাকেই বুঝিয়েছেন কারণ এটা (অর্থা আল্লাহ তার রাসূলের পূর্ণ আনুগত্যই) একমাত্র মাধ্যম যা তাঁর নৈকট্য দিতে পারে এবং তার রহমতের দরজা খুলতে জান্নাতে প্রবেশ করাতে সক্ষম তাই বলছেনঃ

"হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তার কাছে অসীলা (পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে নৈকট্য) অন্বেষণ কর আর তার রাস্তায় জিহাদ কর যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পার"
সূরা আল-মায়িদাহ্: ৩৫

নেককার বান্দাদেরকে যারা অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে এমন মুর্খ, চেতনাহীন লোকদেরকে আল্লাহ তা'আলা পরিহাস করেছেন কারণ তারা নেককার বান্দাদেরকে অসীলা বানাচ্ছে, অথচ নেককার বান্দারা নিজেরাই এই অসীলা তথা আল্লাহর আনুগত্য দ্বারা নৈকট্য হাসিলের অধিক মুখাপেক্ষী আর ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের দ্বিতীয় কোন পথ নেই,
যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
"তারা যাদের আহবান করছে তারা নিজেরাই তাদের প্রভূর নৈকট্য লাভের জন্য অসীলা খুঁজছে তারা তার রহমতের আশা করছে, তার
শাস্তির ভয় করছে, নিশ্চয়ই আপনার প্রভুর শাস্তি ভীতিপ্রদ"
সূরা আল-ইসরা: ৫৭

বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, সমস্ত অমনযোগী লোকেরা যাদেরকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছে তাদের সত্তার উপর ভরসা করে থাকার ফলে নেক আমল করা থেকে বিরত থাকছে, খারাপ কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে যা মুসলমানদের অধঃপতনের কারণ হয়েছে তারা ভুলে গেছে বা ভুলে থাকার ভান করছে যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূলকে - যিনি সমস্ত মানব সন্তানের নেতা - তাঁকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ
"বলুনঃ আমি আমার নিজের কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখিনা"
সূরা আল-রাফ: ১৮৮

অনুরুপভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কলিজার টুকরা কন্যাকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ
"হে ফাতিমা ! আমার কাছে যত সম্পদ আছে তার থেকে যা ইচ্ছা হয় চেয়ে নাও, আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোন কাজে আসবনা"
বুখারী মুসলিম

তিনি আরো বলেন :
"যখন কোন মানুষ মারা যায় তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, কেবলমাত্র তিনটি আমল ব্যতীত..."
মুসলিম

যদি নবীগণ নেক্কার লোকদের ব্যক্তিসত্তার অসীলা গ্রহণ জায়েয না হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীল না থাকত, বরং আমাদের সামনে উমর (রাদিয়াল্লাহু আন্হু) এর সেই ঘটনাটিই শুধু থাকত, যাতে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মৃতু্যর পর তাঁর অসীলা বাদ দিয়ে তার চাচা আব্বাসের দুআ' শরণাপন্ন হয়েছিলেন, তবে অসীলাবাদী দলের মুলোৎপাটনে তাই যথেষ্ট হত

ইমাম আবু হানীফা (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) কতই না সুন্দর বলেছেন:
"আমি আল্লাহর কাছে আল্লাহ ব্যতীত অপর কিছুর মাধ্যমে কিছু চাওয়াকে হারাম মনে করি"
দুররে মুখতার হানাফীদের অন্যান্য কিতাবে তা ইমাম সাহেব থেকে বর্ণিত আছে

যদি ব্যক্তি স্বত্বা দ্বারা অসীলা দেয়া জায়েজ হতো, তবে কুরআন হাদীসের যাবতীয় দুআ' যার সংখ্যা অগণিত তা ব্যক্তি সত্তার অসীলা দিয়েই আসত (কিন্তু তার একটিও সেভাবে আসেনি)

***তিনঃ যারা স্রষ্টা সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম বলতে বুঝেছেন সেই রিসালাতকে যার মানে হলো দ্বীন প্রচার, শিক্ষাদান দ্বীনের প্রশিক্ষণ তারা এই রিসালাতের উচ্চ মর্যাদা এবং এর প্রতি মানব জাতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন ফলে তারা শরয়ী বিধান লাভের উদ্দেশ্যে এবং ঐশী বাণী বা ওহীর আলোকে আলোকিত হওয়ার জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বড় মাধ্যম এবং বৃহ অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছেন যেমনিভাবে তারা কুরআন অধ্যয়ন করছেন তেমনিভাবে তারা রাসূলের পবিত্র জিবনী তার সুন্নাত অধ্যয়ন করছেন এতে তাদের শ্লোগান হচ্ছে আল্লাহর বাণীঃ
"নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে আল্লাহর কাছ থেকে নূর এবং সুস্পষট গ্রন্থ এসেছে, এর দ্বারা যারা আল্লাহর সন্তুষটির পিছনে ধাবিত হয় আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত প্রদান করেন, আর তাদেরকে তাঁর ইচ্ছা মোতাবেক অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যান, এবং সরল সোজা পথে পরিচালিত করেন "
সূরা আল-মায়িদাহ্: ১৫, ১৬

এরাই হলো মুক্তি প্রাপ্ত দল যাদের কথা পূর্বোক্ত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এবং তাদেরকেই জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে কিন্তু দুঃখের বিষয়: গ্রুপের পথ বিপদসংকুল, কন্টকাকীর্ণ কেননা সত্যিকার ইসলাম আজ অপরিচিত হয়ে পড়েছে অধিকাংশ মুসলমান এর থেকে অনেক দুরে সরে গেছে তারা দ্বীনকে বিদআ' মনগড়া রসম রেওয়াজে পরিবর্তন করেছে এই রোগ অতি পুরাতন, ব্যাপারে সংস্কারকদের ভুমিকা খুব ভয়াবহ কষ্টসাধ্য

উমর বিন আব্দুল আজীজ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন
"আমরা এমন কাজ সংসকার করতে চেষ্টা করছি যাতে আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কোন সাহায্যকারী নেই, যে কাজ করতে গিয়ে বৃদ্ধরা তাদের জীবন শেষ করেছে, আর ছোট ছোট ছেলেরা যুবক হতে চলেছে, বেদুঈনগণ তাদের বাস্তু ত্যাগ করে চলে গেছে তারা এটাকে দ্বীন (ধর্ম) মনে করেছে অথচ এটা আল্লাহর কাছে দ্বীন বলে সাব্যস্ত নয়"

অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়, কারণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বীনের করুণ দৃশ্যের কথা বর্ণনা করতে যেয়ে বলেছেন,
"ইসলাম অপরিচিত হিসাবে শুরু হয়েছে যেভাবে তা শুরু হয়েছিল সেভাবে আবার (অপরিচিত) অবস্থায় ফিরে আসবে সুতরাং গরীব (এই অপরিচিত) দের জন্যই সুসংবাদ) হাদীসটি মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আন্হু) থেকে বর্ণিত
অপর বর্ণনায় এসেছে,
"বলা হলঃ হে আল্লাহর রাসূল এই গরীব (অপরিচিত) রা কারা? বললেনঃ বিভিন্ন গোত্র থেকে উত্থিত বিক্ষিপ্ত কতক ব্যক্তিবর্গ"
আহমাদ, ইবনে মাজা
তিরমিযির এক (হাছান) বর্ণনায় এসেছে,
"এই গরীবদের জন্য সুখবর যারা আমার সুন্নাতের যে অংশ মানুষ নষ্ট করেছে তা পূণঃ সংস্কার করে চালু করেছে"
মুসনাদে আহমাদে অপর এক সহীহ বর্ণনায় এসেছে,
"এই গরীব (অপরিচিত) গণ হলোঃ অনেক খারাপ লোকের মাঝখানে এমন কিছু ভাল লোক, যাদের অনুসারীর চেয়ে বিরোধীরাই হবে বেশী"

সুতরাং, গ্রুপকেই সংসকার কাজে এগিয়ে যেতে হবে, সংস্কারের আলোতে মুসলমানদের জাগিয়ে পুনরায় সঠিক ইসলামের দিকে ফিরিয়ে নিতে হবে আর বিরোধীতা বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের আমরা তাই বলব যা আল্লাহ তা'আলা তাদের পূর্বসুরীদেরকে বলেছেনঃ
"আমাদের কি হলো যে, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করবনা অথচ তিনি আমাদেরকে যাবতীয় পথের দিশা দিয়েছেন? আর আমরা তোমাদের শত আঘাতের বিপরীতে ধৈর্য্য ধারণ করবো, ভরসাকারীগণ যেন শুধু আল্লাহর উপরই ভরসা করেন"
সূরা ইব্রাহীম: ১২

লেখক : . আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া,

সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব